মুহাম্মাদ আল ফাতিহঃ যাঁর ব্যাপারে নবী(ﷺ) সুসংবাদ দিয়েছিলেন

মুহাম্মাদ আল ফাতিহঃ যাঁর ব্যাপারে নবী(ﷺ) সুসংবাদ দিয়েছিলেন [১]

মূলঃ Islamweb
অনুবাদঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
.
প্রায় ৮ শতাব্দী ধরে মুসলিম সেনানায়কদের স্বপ্ন ছিলো কনস্টান্টিনোপল জয় করা। শহরটা এখন তুরস্কের ইস্তাম্বুল নামেই পরিচিত।
সাহাবী মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান(রা.) এর সময় থেকে বহুবার সেই শহর জয় করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সবগুলো চেষ্টাই ব্যর্থ হচ্ছিলো।
প্রত্যেক মুসলিম সেনাপতিই রাসুল(ﷺ) এর হাদিসে বর্ণিত সেই প্রশংসিত সেনাপতি হতে চাইতেন – “”নিশ্চিতরূপে তোমরা মুহাম্মাদ আল ফাতিহঃ যাঁর ব্যাপারে নবী(ﷺ) সুসংবাদ দিয়েছিলেন
তার সেনাপতি কতই না উত্তম সেনাপতি হবে এবং তার জয় লাভকারী সৈন্যদলও কতই না উত্তম সৈন্যদল হবে!’” (মুসনাদ আহমাদ)
.
কে এই ব্যক্তি যাঁর ব্যাপারে স্বয়ং নবী (ﷺ) সুসংবাদ দিয়েছেন? তিনি হচ্ছেন উসমানী সুলতান ২য় মুরাদের পুত্র মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.)।
শৈশব থেকেই পরবর্তী জীবনের ধাপগুলোর জন্য অসাধারণ প্রস্তুতি ছিলো তাঁর। তিনি ৮৩৫ হিজরীর ২৭শে রজব, ৩০শে মার্চ ১৪৩২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি তাঁর পিতা সুলতান ২য় মুরাদের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। যিনি ছিলেন ৭ম উসমানী সুলতান। তাঁর পিতা তাঁকে নানাভাবে প্রশিক্ষন দিয়ে একজন সুলতানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবার জন্য প্রস্তুত করে তোলেন।
মুহাম্মাদ আল ফাতিহ কুরআন হিফজ করেন, নবী(ﷺ) এর হাদিস, ফিকহ, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা এবং সমরবিদ্যা সম্পর্কে শিক্ষাগ্রহণ করেন।
সেই সাথে তিনি আরবি, ফার্সী, ল্যাটিন এবং গ্রীক ভাষা শেখেন। তিনি তাঁর পিতার সৈন্যবাহিনীতে বিভিন্ন বিজয় অভিজানে অংশ নেন।

মুহাম্মাদ আল ফাতিহঃ যাঁর ব্যাপারে নবী(ﷺ) সুসংবাদ দিয়েছিলেন

মুহাম্মাদ আল ফাতিহের পিতা তাঁকে একটা ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের শাসক নিযুক্ত করেন যার দ্বারা তিনি সে সময়ের কিছু শ্রেষ্ঠ আলেমের তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে হাতেকলমে প্রশিক্ষন লাভ করতে পারেন।
এই বিষয়গুলো তরুণ যুবরাজের মনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব ইসলামী আদব ও নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।
মুহাম্মাদ আল ফাতিহের শিক্ষা-দীক্ষা ও বেড়ে ওঠা যেসব আলেম তত্ত্বাবধান করতেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শায়খ আক শামসুদ্দিন(র.)।
তিনি তাঁর হৃদয়ের মাঝে জিহাদের আদর্শ প্রোথিত করেন এবং তাঁকে একজন উচ্চাভিলাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। মুহাম্মাদ আল ফাতিহকে তাঁর শায়খ বলেন, তিনি নবী(ﷺ) এর হাদিসে বর্ণিত সেই সেনাপতি হতে পারেন।
এই ব্যাপারগুলো মুহাম্মাদ আল ফাতিহের মন-মানসিকতায় ব্যাপক প্রভাব রাখে।
তিনি জিহাদের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হন, উচ্চাকাঙ্খী হয়ে ওঠেন, বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিখতে শুরু করেন এবং যুদ্ধের নানা কলা-কৌশল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন।

■ ক্ষমতা গ্রহণ এবং হাদিসের ভবিষ্যতবাণী বাস্তবায়নে পদক্ষেপঃ

সুলতান ২য় মুরাদ(র.) ৮৫২ হিজরির ৫ই মুহাররাম ৭ই ফেব্রুয়ারি ১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
পিতার মৃত্যুর পর মুহাম্মাদ আল ফাতিহ ক্ষমতায় আসেন এবং উসমানী সাম্রাজ্যের সুলতান হন। সে সময় তিনি ছিলেন মাত্র ২০ বছরের এক তরুণ। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী, উৎসাহে বলিয়ান এবং উচ্চাকাঙ্খী যুবক।
তিনি বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন। সেই স্বপ্ন তাঁকে এতোই আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো যে তিনি সব সময় শুধু কনস্টান্টিনোপল জয়ের কথা বলতেন।
এমনকি তিনি তাঁর আশপাশের কাউকেও ঐ বিষয় বাদে অন্য কিছু নিয়ে কথা বলতে দিতেন না!
স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ ছিলো বসফরাস প্রণালীর নিয়ন্ত্রন নেয়া। যার ফলে ইউরোপ থেকে কনস্টান্টিনোপলের জন্য রসদ অথবা সাহায্য আসার পথ রুদ্ধ হয়ে গেলো।
তিনি বসফরাস প্রণালীর ইউরোপের দিককার সাগরতীরে বিশাল এক দুর্গ নির্মাণ করেন। শীর্ষ সিনিয়র অফিসারদের সাথে সাথে সুলতান স্বয়ং এই দুর্গের নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করেন।
‘রোমান দুর্গ’ নামে পরিচিত এই দুর্গটি নির্মাণ করতে তিন মাস সময় লাগে। বসফরাস প্রণালীর অপর তীরে ছিলো আনাতোলিয়া দুর্গ।

“সুলতানী কামান” ছবি wikipedia

এর ফলে উসমানী বাহিনীর অনুমতি না নিয়ে কোনো জাহাজের পক্ষে সে অঞ্চল দিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে গেলো। সে সময়ে একজন সুদক্ষ প্রকৌশলী সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের বাহিনীর জন্য কিছু কামান তৈরি করে দিয়েছিলেন।
একেকটি কামান ছিলো ৭০০ টন ওজনের এবং এর গোলাগুলো ছিলো দেড় হাজার কেজি ওজনের। এমন কামান এর আগে কেউ কখনো দেখেনি।
এর গোলাবর্ষণের আওয়াজ অনেক বিশাল দূরত্ব থেকেও শোনা যেতো।
কামানগুলো ১০০ জন শক্তিশালী মানুষের সহযোগিতায় ১০০টি ষাঁড়ের দ্বারা টানতে হতো। এই দানবীয় কামানের নাম দেয়া হলোঃ “সুলতানী কামান”।

■ কনস্টান্টিনোপল বিজয় এবং হাদিসের সুসংবাদ বাস্তবায়নঃ

সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) ২,৬৫,০০০ সৈন্যের বিশাল এক বাহিনী নিয়ে কনস্টান্টিপোলের দিকে যাত্রা শুরু করলেন।
সে বাহিনীতে পদাতিক সৈন্য, অশ্বারোহী সব ধরনের যোদ্ধা ছিলো। সেই বাহিনীতে ছিলো দানবীয় কামানগুলো।
সুলতানের ফৌজ কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করলো এবং শহরকে ঘিরে রাখা প্রাচীরগুলো লক্ষ্য করে উসমানী কামানগুলো দিন-রাত মুহূর্মুহু গোলাবর্ষণ করতে লাগলো।
নিত্যনতুন যুদ্ধকৌশল দিয়ে সুলতান শত্রুদেরকে সময়ে সময়ে চমকে দিতে লাগলেন।
শেষ পর্যন্ত শহর প্রতিরক্ষাকারী বাহিনী হাল ছাড়লো এবং শহরের নিয়ন্ত্রন ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো।
অবশেষে ৮২৭ হিজরির ২০শে জুমাদাল আউয়াল, ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে মে তারিখ ভোরে উসমানী বাহিনী নগরের দেয়াল ভেদ করতে সক্ষম হলো। পলায়নরত নগর প্রতিরক্ষকদেরকে বিতাড়িত করলো।
অবাক বিস্ময়ে র জনগণ দেখলো নগর প্রাচীরে উসমানী ঝাণ্ডা উড়ছে এবং বানের পানির মতো সৈন্যবাহিনী নগরের ভেতর ঢুকছে।
উসমানী বাহিনী শহরটি জয় করার পর সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) ঘোড়ায় করে এক বিশাল শোভাযাত্রা সহযোগে সেখানে প্রবেশ করলেন।
সাথে ছিলেন তাঁর মন্ত্রী এবং সেনাপতিরা। সেই সময় থেকেই তিনি ‘মুহাম্মাদ আল ফাতিহ’ (বিজয়ী মুহাম্মাদ) নামে খ্যাত। সৈন্যবাহিনীর সবাই তখন চিৎকার করছিলোঃ
“মা শা আল্লাহ! মা শা আল্লাহ! সুলতান জিন্দাবাদ! সুলতান জিন্দাবাদ!”

সুলতানের সেই শোভাযাত্রা আয়া সোফিয়া গির্জায় গিয়ে থামলো।

সেখানে শহরের (খ্রিষ্টান) জনগণ একত্রিত হয়েছিলো।
সুলতানকে আসতে দেখেই তারা সুলতানের উদ্যেশ্যে নত হয়ে গেলো এবং সিজদায় পড়ে গেলো।
তারা প্রচণ্ড আতঙ্কে কাঁদছিলো কেননা তারা জানতো না তাদের ভাগ্যে কী আছে। তারা বুঝতে পারছিলো না সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ তাদেরকে কী করবেন।
সুলতান সেখানে পৌঁছে তাঁর ঘোড়া থেকে নামলেন। সেই আল্লাহ তা’আলার নিকট শুকরিয়া জানিয়ে ২ রাকাত সলাত আদায় করলেন যিনি তাঁকে এই মহা বিজয়ের সৌভাগ্য দান করেছেন।
শহরের জনগণ তখনও আকুল হয়ে কেঁদে তাঁর উদ্যেশ্যে নত হয়ে এবং সিজদায় পড়ে ছিলো। সুলতান তাদের উদ্যেশ্যে বললেনঃ
“ওঠো। আমি সুলতান মুহাম্মাদ। আমি তোমাদেরকে, তোমাদের ভাইদেরকে (অন্য খ্রিষ্টানদেরকে) এবং উপস্থিত সবাইকে বলতে চাই – তোমাদের জীবন এবং তোমাদের স্বাধীনতা এখন থেকে নিরাপদ।”
সুলতান এরপর গির্জাটিকে মসজিদে পরিনত করলেন। [২] প্রথমবারের মতো সেখান থেকে আযানের ধ্বনি শোনা গেলো।
সেই সময় থেকে আজ অবধি সেটি আয়া সোফিয়া মসজিদ নামে পরিচিত। তিনি কনস্টান্টিপোলকে তাঁর সাম্রাজ্যের রাজধানী করার সিদ্ধান্ত নেন।
এর নাম দেয়া হয় ‘ইসলামবোল’ যার মানে হলো ইসলামের শহর। পরবর্তীতে একে বিকৃত করে ‘ইস্তাম্বুল’ বানিয়ে দেয়া হয়। শহরের জনগণের প্রতি সুলতান অত্যন্ত সহনশীল ও দয়ালু ব্যবহার করেন।
তিনি তাদের সাথে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী আচরণ করেন। তিনি তাঁর সৈন্যদেরকে যুদ্ধবন্দীদের সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ দেন।
সুলতান নিজের অর্থ দিয়ে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধবন্দীর মুক্তিপণ পরিশোধ করে দেন।
এমনকি অবরোধের সময় যারা শহর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো সুলতান তাদেরকেও বাড়ি ফিরে এসে বসবাসের অনুমতি দেন।

■ কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের ফলাফলঃ

মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) যখন এ বিজয় অর্জন করেন তখন তিনি ছিলেন মাত্র ২৩ বছরের এক যুবক। এ থেকে বোঝা যায় তিনি এই তরুণ বয়সেই কী অসাধারণ রণকুশলী ছিলেন।
তিনি নবী(ﷺ) এর দেয়া সেই সুসংবাদ বাস্তবায়নের যোগ্যতা অর্জন করেন যেখানে বলা হয়েছিলো উত্তম এক সেনাপতি এই নগর জয় করবে।
পরবর্তীতে মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) বলকান অঞ্চলের দিকে বিজয় অভিজান পরিচালনা করেন। তিনি সার্বিয়া, গ্রীস, রোমানিয়া, আলবেনিয়া এবং বসনিয়া হার্জিগোভিনা জয় করেন।
তিনি রোম বিজয় করবার কথাও ভাবছিলেন যেটা সফল হলে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের মতো তাঁর গৌরবের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হতো।
সেই কঠিন স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তাঁকে ইতালী জয় করতে হতো।
তিনি এ জন্য প্রচণ্ড শক্তিশালী এক সেনাবহর প্রস্তুত করেন। তিনি তাঁর বাহিনী এবং বিপুল পরিমাণে যুদ্ধ কামান নিয়ে নিয়ে ইতালীর শহর অটারান্ট-এ পৌঁছান।
তিনি ক্রমে সেখানকার দুর্গ অধিকার করতে সক্ষম হন ৮৮৫ হিজরীর জুমাদাল আউয়াল মাসে। যেটা ছিলো ১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাস।
রোমে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) অটারান্টকে উত্তর দিকে তাঁর সেনা অভিজানের ঘাটি বানাতে মনস্থির করেন।
ইউরোপিয় বিশ্ব এই পরিকল্পনার কথা জেনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
তারা ধরেই নিয়েছিলো মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) এর হাতে ঐতিহাসিক শহর রোমের পতন হওয়া শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
কিন্তু যখন তিনি তাঁর স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন এমন সময়ে হঠাৎ করে তিনি ইন্তেকাল করেন।
সময়টা ছিলো ৮৮৬ হিজরীর ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ৩রা মার্চ ১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দ। তাঁর মৃত্যুর সংবাদে পুরো ইউরোপ উৎফুল্ল হয়ে ওঠে।
প্রচণ্ড আনন্দ ও খুশীর প্রকাশভঙ্গী হিসেবে রোমের পোপ সেখানকার গির্জাগুলোতে ঈশ্বরের নিকট ধন্যবাদ জানিয়ে বিশেষ প্রার্থনার আদেশ দেন।

মুহাম্মাদ আল ফাতিহঃ যাঁর ব্যাপারে নবী(ﷺ) সুসংবাদ দিয়েছিলেন

মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) ছিলেন একজন সুদক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং মানবসভ্যতার পৃষ্ঠপোষক।
বিচক্ষন নের্তৃত্ব এবং সুপরিকল্পিত বিভিন্ন নীতিমালার দ্বারা মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) নিজ শাসনামলে উসমানী সালতানাতের সীমা এই পরিমাণে বৃদ্ধি করেন যা পূর্বে কখনো সম্ভব হয়নি।
এই বিজয়গুলো তাঁর একার কৃতিত্বে সম্ভবপর হয়নি। বরং বহু বিশ্বস্ত সাথীর সহায়তায় তা সম্ভব হয়েছে।
তাঁদের সকলের সহায়তায় তিনি এক সংবিধান কায়েম করতে সক্ষম হন যা আল্লাহর কিতাব এবং নবী(ﷺ) এর সুন্নাহর ভিত্তিতে রচিত ছিলো।
উসমানী সালতানাত প্রায় চার শতাব্দীকাল ব্যপি এই সংবিধানের উপরে ছিলো।
প্রচণ্ড কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝেও তিনি ৩০০ও অধিক মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন, যার মধ্যে শুধু ইস্তাম্বুলেই ছিলো ১৯২টি।
তিনি ৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তাঁর নির্মিত সব থেকে বিখ্যাত স্থাপত্যের অন্যতম হচ্ছে সুলতান মুহাম্মাদ মসজিদ, আবু আইউব আনসারী(রা.) মসজিদ এবং সারাই তুবকাবু প্রাসাদ।
সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। তিনি একজন কবি ছিলেন এবং নিয়মিত আবৃত্তি করতেন।
তিনি আলেম-উলামা এবং কবিদের সাহচর্য পছন্দ করতেন এবং তাঁদের কাউকে কাউকে মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছিলেন।
তিনি যে কোনো বিষয়ে কোনো পণ্ডিত ব্যক্তির সংবাদ পেলেই তাঁকে সাহায্য করতেন অথবা তাঁকে ইস্তাম্বুল আসতে আমন্ত্রন জানাতেন যাতে তাঁর জ্ঞান থেকে উপকৃত হওয়া যায়।

■ মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) এর চারিত্রিক গুণাবলীঃ

মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) ছিলেন একজন ধার্মিক মুসলিম যিনি ইসলামী বিধি-বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতেন।
শৈশব থেকে যেভাবে তাঁকে বড় করা হয়েছে এর ফলশ্রুতিতে তিনি একজন অত্যন্ত দ্বীনদার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর আচরণ ছিলো সুসভ্য; মধ্যযুগে ইউরোপিয়দের কাছে যা ছিলো একদমই অপরিচিত একটা জিনিস।
এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে শৈশবে তাঁর শিক্ষকদের থেকে পাওয়া জীবনের সেই লক্ষ্য, যাঁরা তাঁকে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের জন্য অনুপ্রানিত করতেন।
যে শহরটি জয় করা ছিলো তাঁর জীবনের সেরা সাফল্য।
মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেন কঠোর এবং নিরলস পরিশ্রমের দ্বারা, নানা রকমের সুপরিকল্পিত পদক্ষেপের দ্বারা।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কনস্টান্টিনোপল অবরোধের পূর্বে তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে কামান তৈরি করেন, সেনাবহর প্রস্তুত করেন এবং যুদ্ধজয়ের জন্য সকল প্রকার উপায়-উপকরণ অবলম্বন করেন।
উচ্চাকাঙ্খা, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা এবং লক্ষ্যে পৌঁছাবার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দ্বারা দ্বারা তিনি তাঁর স্বপ্নকে সত্য করেন।
অন্তরের আশাকে বাস্তবে পরিনত করেন। এভাবে তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা মুসলিম বিজেতা এবং নায়কে পরিনত হয়েছেন। [৩]

মুহাম্মাদ আল ফাতিহঃ যাঁর ব্যাপারে নবী(ﷺ) সুসংবাদ দিয়েছিলেন [১]

মূল প্রবন্ধের লিঙ্কঃ https://is.gd/pdOUpH

■ অনুবাদকের টিকা

[১] কারো কারো মতে হাদিসে বর্ণিত সেনাপতি হচ্ছেন উসমানী সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.)।
আবার কেউ কেউ একে কিয়ামতের আগের সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
এই প্রবন্ধের লেখক প্রথম মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সে অনুযায়ী হুবহু অনুবাদ করা হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত সেই সেনাপতি কে এ ব্যাপারে নিশ্চিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর নিকটে।
এ ব্যাপারে এই আর্টিকেলটি পড়া যেতে পারেঃ https://is.gd/I9PCre
[২] যুদ্ধরত এবং আত্মসমর্পণ না করা শত্রুদের ক্ষেত্রে তাদের ভূখণ্ড মুসলিমদের অধীনে এলে তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ বানানো শরিয়তে বৈধ। যেহেতু তখন সে অঞ্চলের মালিক মুসলিমরা।
তবে চুক্তিরত এবং জিজিয়া দিয়ে বসবাসকারী অমুসলিমদের উপাসনালয়কে মসজিদ বানানো হয় না, তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় সংরক্ষিত থাকে।
কনস্টান্টিনোপলের বাহিনী যেহেতু মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত ছিলো, সে হিসেবে তাদের গির্জাটিকে মসজিদ বানানো হয়েছে।
তবে কিছু সূত্রমতে সুলতান মুহাম্মাদ সে স্থানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও গির্জার রক্ষক সাধুদেরকে অর্থ প্রদান করে তাদের থেকে গির্জাটি ক্রয় করে নিয়ে সেটিকে মসজিদ বানান।
সেই চুক্তিনামা এখনো মসজিদটিতে আছে। এ প্রসঙ্গে মিসরীয় লেখক এবং সাংবাদিক সালিম আযুযের একটি প্রবন্ধ রয়েছে আল জাজিরার ওয়েবসাইটেঃ

এ প্রসঙ্গে ডা. জাকির নায়েকের আলোচনাটিও শোনা যেতে পারেঃ

[৩] মুহাম্মাদ আল ফাতিহ(র.) এর জীবন ইতিহাস, কনস্টান্টিনোপল বিজয় এসব বিষয়ে আরো জানতে পড়ুনঃ
মুহাম্মদ আল ফাতিহ – ড. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবী
অথবা দেখুন এই ভিডিও লেকচারগুলোঃ

আরো পড়ুন:

Related Posts

Add Comment

You cannot copy content of this page