কোরিয়ায় রি-এন্ট্রি প্রাপ্ত কমিটেড প্রার্থীদের করনীয় (দ্বিতীয় পর্ব)

কোরিয়ায় রি-এন্ট্রি প্রাপ্ত কমিটেড প্রার্থীদের করনীয় (দ্বিতীয় পর্ব)
ইপিএস সিস্টেমে কমিটেড কর্মী হিসেবে রিএন্ট্রি প্রাপ্তদের করণীয় বিষয় সমূহঃ

পর্বটি সহজে বুঝানোর জন্য অনেক দীর্ঘাকারে করা হয়েছে। মনোযোগ সহকারে পড়ুন ও সকলের দৃষ্টিতে আনতে শেয়ার করুন।

প্রথম পর্বে আমরা জেনেছি দেশে আসার আগে করণীয়সমূহ কি কি আজ আমরা জানব দেশে আসার পর করণীয় কি কি এবং তা সহজেই কিভাবে করবেন।

দেশে আসার আগেই ঠিকমত প্ল্যান করে রাখুন আপনি কখন কি করবেন? আগেভাগেই প্ল্যান করে রাখলে ৩মাস ঝামেলা ছাড়াই অতিবাহিত করতে পারবেন।

অ্যারাইভেল রিপোর্ট (외국인근로자 귀국신고서):

দেশে আসার ৭ দিনের মধ্যেই বোয়েসেলে এসে স্বশরীরে অ্যারাইভেল রিপোর্ট (외국인근로자 귀국신고서) করতে হবে।

পরামর্শ থাকবে যদি আপনার বাড়ি ঢাকা থেকে অনেক দূরে হয় তাহলে একদিন ঢাকায় অবস্থান করে অ্যারাইভেল রিপোর্ট ও যক্ষা টেষ্ট করে বাড়িতে যাবেন।

অ্যারাইভেল রিপোর্ট ও সিসিভিআই এর তথ্য হালনাগাদ ফর্ম (একই পেজের এপিঠ ওপিঠ) করার সময় কমিটেড সিরিয়াল নাম্বার ও রেজিস্ট্রি নাম্বার(বোয়েসেলের যে লিষ্টে আপনার নাম আছে সেখানে একটা সিরিয়াল নাম্বার ও রেজিস্ট্রি নাম্বার আছে)

আপনার ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার, ব্যাংকের নাম, ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নাম্বার, কোরিয়ান আইডি কার্ডের নাম্বার, কোরিয়া ত্যাগের তারিখ, বাংলাদেশে আপনার ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, জরুরী প্রয়োজনে মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করতে হয়।

সিসিভিআই এর তথ্য হালনাগাদ ফর্মের ক্ষেত্রে নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নাম্বার, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোকেশন, জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের ব্যক্তি ও তার নাম্বার সহ কিছু বিষয়ে(ছবিতে দেখুন) নো অপশনে টিক চিহ্ন দিয়ে ফর্মটি পূরণ করে ১১৯ নাম্বার রুমে জমা দিন।

সাথে অবশ্যই পাসপোর্ট(একাধিক থাকলে সেগুলো সহ) ও বাংলাদেশি ন্যাশনাল আইডি কার্ড সহ ফর্মের সাথে জমা দিন।

মূল পাসপোর্ট ও আইডি কার্ডও সাথে নিয়ে যাবেন কেননা বোয়েসেল অফিস স্টাফ সেটাকে স্ক্যান করে রেখে দিবে।

কোরিয়ায় রি-এন্ট্রি প্রাপ্ত কমিটেড প্রার্থীদের করনীয় (দ্বিতীয় পর্ব)

যক্ষা টেষ্ট (টিউবারকিউলোসিস টেষ্ট):

যেটা কোরিয়ান দূতাবাসের নির্ধারিত বনানীস্থ প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট মেডিক্যাল সেন্টারে খালি পেটে করতে হবে।টেষ্টের জন্য আলাদাভাবে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে আপনাকে ২কপি ছবি ও টেষ্ট ফি বাবদ ১৫০০ টাকা গুনতে হবে।

টেষ্টের জন্য ওজন পরিমাপ,উচ্চতা নির্ণয়, কফ ও এক্সরে করে শুধু। করা হয়ে গেলে একটি রিসিপ্ট দিয়ে দিবে এবং ২~৩ পরেই আপনি/অন্য কেউ রিসিপ্ট দেখিয়ে যক্ষা টেষ্টের সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে পারবেন।

আগেই বলা হয়েছে যদি আপনার বাসা ঢাকার অদূরে হয় তাহলে ঢাকায় একদিন অবস্থান করে এই টেষ্টটি করে যাবেন নতুবা অ্যারাইভেল রিপোর্ট করার জন্য ঢাকায় আসলে তখনও করতে পারেন।

বাকি ডকুমেন্ট গুলো দেশে আসার ১৪দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা রয়েছে বোয়েসেল অফিস থেকে।

আমাদের দেওয়া পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলে ১৪ দিনের আগেই দিতে পারবেন নয়তোবা আরও বেশি সময় লাগতে পারে।

 

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সঃ

বাসায় আসার পরেরদিনই কিংবা কোন বিলম্বিত না করে দ্রুত পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করুন।

অনলাইনে কিংবা সরাসরি থানায় গিয়ে আবেদন করুন।

এই কাজটিই সবচেয়ে ভেজালময় কাজ ও সময় সাপেক্ষের বিষয়।

অনলাইনে আবেদন করতে চাইলে এই http://pcc.police.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে নির্দেশনানুযায়ী নিজেই করুন।

আর থানায় করতে চাইলে হাতে লেখা আবেদন ফর্ম ও সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রেজারিকৃত ৫০০টাকার চালান কপি দিয়ে নিজস্ব থানায় আবেদন করুন।

থানা থেকে ভেরিফিকেশন হয়ে গেলে জেলায় যাবে, জেলা থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে আবার থানায় আসতে সময় লাগে তাই বিলম্বিত না করে বাসায় যাওয়ার পরপরই পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদন করুন।

থানায় ভাল সম্পর্ক বা পরিচিত থাকলে ভাল সুবিধা পাওয়া যায় যেটা সরাসরি না বলাই ভাল।

এছাড়াও আপনি নিজেই হাতে হাতে যেমন থানা থেকে সাইন করে জেলায়, জেলা থেকে সাইন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে গিয়ে জমা দিয়ে অল্প সময়ের ভিতরেই পেতে পারেন।

কমিটেড কর্মীদের সবারই আগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করার অভিজ্ঞতা আছে তাই এ বিষয়ে এটুকুই বলাই ভাল। বাকিটা নিজে পরিস্থিতি বুঝে করবেন।

স্বাস্থ্য পরিক্ষাঃ

পাসপোর্টের উল্লেখিত স্থায়ী ঠিকানার সিভিল সার্জনের দপ্তর অফিস থেকে মেডিক্যাল ফিট সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হবে। এই কাজটি একদম সহজ কাজ।

বোয়েসেলের নোটিশ বোর্ড হতে মেডিক্যাল ফর্মটি প্রিন্ট করে এককপি ছবি সহ নিকটস্থ কোন মেডিক্যাল সেন্টার হতে টেষ্ট গুলো করিয়ে সিভিল সার্জনের নিকট থেকে সাইন করিয়ে নিবেন।

এই কাজটি কোরিয়া প্রথমবার যাবার আগেও করিয়েছেন এখন তার চেয়ে অত্যাধুনিক সিস্টেম হয়েছে।

সেইসময় নতুন ছিলো তাই অনেককেই ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়েছিলো কিন্তু এখন তারা ইতিমধ্যেই কয়েকশ জনের করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বলে দিনে দিনেই হাতে পেয়ে যাবেন।

ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহঃ

ফিঙ্গার প্রিন্টগুলো আগে বোয়েসেলের পাশে থেকে করা হতো এখন বিদেশগামীদের উপর চাপ ও ভোগান্তি কমাতে নিজ নিজ জেলা/ বিভাগীয় শহরের (এই http://www.boesl.org.bd/Uplo…/NoticeboaedAttachments/149.pdf  লিংক থেকে

জেনে নিন আপনি কোন এলাকার আন্ডারে করবেন।

উল্লেখিত ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করে সঠিক ঠিকানাটাও একবার জেনে নিন কেননা ঠিকানা পরিবর্তনেরও সম্ভাবনা থাকে) আন্ডারে করা যায়।

ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহের জন্য আপনাকে যা যা করতে হবেঃ

আপনার জন্য নির্ধারিত যে এলাকা সেই এলাকার কর্মসংস্থান ব্যাংকে গিয়ে ২২০টাকার (২০০ টাকার পে অর্ডার+২০টাকা সার্ভিস চার্জ) পে অর্ডার করুন।

পে অর্ডার কপি, পাসপোর্টের ফটোকপি ও বোয়েসেলের লিষ্টে যে আপনার নাম আছে ।

সেই কপিটি প্রিন্ট করে আপনার নাম ও সিরিয়াল নাম্বারটি মার্কিং করে নির্ধারিত জেলা/বিভাগীয় ম্যানপাওয়ার অফিসে যাবেন।

এই কাজটিও অতি দ্রুতই আপনি সম্পন্ন করতে পারবেন।

ও এই কাজগুলি নিয়ে হয়তো দুই চারদিন ব্যস্ত সময় কাটাতে হতে পারে। তবে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি বুঝে কাজ করুন সহজেই হয়ে যাবে।

এই কাজগুলোর পাশাপাশি বোয়েসেলের নোটিশ বোর্ড থেকে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম অথবা এই লিংক থেকে ডাউনলোড করুন।

(http://www.boesl.org.bd/Upload/NoticeboaedAttachments/8.pdf)

কিভাবে পূরণ করবেন তার নমুনা দেখতে এই লিংকে ক্লিক করে দেখুন

(http://www.boesl.org.bd/Upload…/NoticeboaedAttachments/9.pdf)

মনে রাখবেন, ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণের জন্য এক কপি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড কৃত ছবি লাগবে।

E-9/E-10/H-2 স্ট্যাটাস ফর্ম সাম্পল অনুযায়ী (ফর্মটি এই

(http://www.boesl.org.bd/NoticeboaedAttachments/22.pdf

লিংকে স্যাম্পল কপি সহ পাওয়া যাবে) পূরণ করে রাখুন।

কোরিয়ায় রি-এন্ট্রি প্রাপ্ত কমিটেড প্রার্থীদের করনীয় (দ্বিতীয় পর্ব)

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেলে ঢাকায় গিয়ে যক্ষা টেষ্টের সনদ (আপনিও সংগ্রহ করতে পারেন অন্য কারও দ্বারাও সংগ্রহ করতে পারেন) গ্রহণ করুন।

তারপর মগবাজার শাখার সোনালী ব্যাংকে বোয়েসেল চার্জ, ট্যাক্স, স্মার্ট কার্ড ফি, ভিসা ফি ইত্যাদির জন্য বোয়েসেল ঢাকা নামে ৩১,৬৩০টাকার একটি পে অর্ডার করুন।

ব্যাস বোয়েসেলে অফিসে গিয়ে মূল পাসপোর্ট(একাধিক সহ), মূল আইডি কার্ড সহ উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলো জমা দিন।

জমা দেওয়ার সময় অবশ্যই আপনার কমিটেড সিরিয়াল নাম্বারটি লিখে দিবেন।

ডকুমেন্ট গুলো আরেকবার চোখ বুলিয়ে নেই

  1. ভিসা অ্যাপ্লিকেশান ফর্ম (৫ পৃষ্ঠা)
  2.  E-9/E-10/H-2 স্ট্যাটাস ফর্ম
  3.  স্বাস্থ্য পরিক্ষার সনদ
  4.  যক্ষা টেষ্টের সনদ
  5. পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের সনদ
  6.  ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহের কপি
  7.  বর্তমান পাসপোর্টের কালার ফটোকপি (মূলকপি ও একাধিক কপি)
  8.  ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কালার ফটোকপি (মূলকপি)
  9. পে অর্ডার কপি (৩১,৬৩০ টাকার পে-অর্ডার কপি)

বোয়েসেল থেকে প্রাপ্ত স্টিকারের উপরে সিরিয়াল নাম্বার,নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার লিখে মূল পাসপোর্ট(একাধিক সহ) এবং আইডি কার্ড সহ উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলো জমা দিয়ে নিশ্চিন্তে বাসায় আসুন।

এখন পরিবারকে সময় দিতে থাকুন।

এদিকে সপ্তাহ দুইয়েক পরে কোম্পানিতে ফোনে/মেসেজে জানান আপনার জন্য সিসিভিআই এর আবেদন করতে কিংবা আবেদন করেছে কিনা জেনে নিন।

কেননা সিসিভিআই আবেদনের পরই কেবল ভিসার কার্যক্রম শুরু হয়।

আপনাদের সুবিধার জন্য কোম্পানিকে কিভাবে বলতে পারেন সেটাও জানিয়ে দিচ্ছি আমরা এই ধরুন সিসিভিআই এর জন্য আবেদন করতে বলবেন তখন এভাবে ফোনে বলুন কিংবা মেসেজ করুন

사장님,제가 귀국신고를 했습니다. 이제 사장님께서 사증발급인정을 신청하시면 됩니다/ 신청해주십시오
মালিক ব্যতীত অন্য কেউ হলে তার পদবি লিখে মেসেজে কিংবা ফোনে বলুন।

সিসিভিআই এর জন্য আবেদন করেছে কিনা সেটা জানতে এভাবে বলুন কিংবা মেসেজ করুন।
사장님,제가 송출기관에 가서 귀국신고를 했는데 저쪽에서 사증발급인정을 신청하셨습니까?

সিসিভিআই এর আবেদন হয়ে গেলে ভিসা কার্যক্রম শুরু হবে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনমাস পূর্ন হওয়ার বোয়েসেলের লিষ্টে আপডেট আসবে কখন টিকেটের টাকা জমা দিতে হবে এবং কখন ব্রিফিং-এর জন্য উপস্থিত হতে হবে।

সেই অনুযায়ী টিকেটের টাকা জমা দিন ও ব্রিফিং-এ উপস্থিত হওয়ার আগে জামানতের ১লক্ষ টাকা

(এখন টাকা আরো বারিয়েছে )

বাবদ বোয়েসেল ঢাকা নামে মগবাজার সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে পে অর্ডার করে কপিটি বোয়েসেলে জমা দিন।

নির্ধারিত ফ্লাইট ও ব্রিফিং এর সময় অবশ্যই সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, কালো শু পরিধান করে বোয়েসেল এ উপস্থিত থাকতে হবে।

ব্রিফিং এ উপস্থিত হবার জন্য অঙ্গিকারনামা ৩০০ টাকার (১০০ টাকার তিনটি) নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রিন্ট করতে হবে)।

তবে রেডি স্ট্যাম্প বোয়েসেলেও পাওয়া যাবে। আরও একটি বিষয় এই যে, ব্রিফিং ও টিকেটের টাকা জমা দিতে অবশ্যই ব্যাংক একাউন্ট নং, নাম ও সিটি/সুইফট কোড দিতে হবে।

আরও পড়তে পারেন:

কোরিয়ায় রি-এন্ট্রি প্রাপ্ত কমিটেড প্রার্থীদের করনীয় (প্রথম পর্ব)

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার উপায়

কোরিয়ান ই-৭ ও F-২-৬ ভিসার সুবিধা অসুবিধা

Related Posts

No Responses

Add Comment

You cannot copy content of this page