একজন দুনিয়া বিমুখ আলেম ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) । নিম্নের ঘটনাটি এরই জলন্ত প্রমাণ –
একবার হায়দারাবাদের নবাব মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ)-এর নিকট চিঠি লিখল যে, ‘আপনি আমার দরবারে আসুন।
এখানে আপনি প্রত্যহ মাত্র একঘন্টা করে পড়াবেন। সম্মানী হিসেবে আপনাকে প্রতি মাসে সাতশত টাকা প্রদান করা হবে।
একজন দুনিয়া বিমুখ আলেমের উত্তর
নবাবের চিঠির উত্তরে মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) লিখলেন, ‘নবাব সাহেব! আমি মাদরাসা থেকে দশ টাকা বেতন পেয়ে থাকি।
এর ছয় টাকায় আমার যাবতীয় প্রয়োজনাদী পূরণ হয়ে যায়। দু’টাকা পিতার জন্য পাঠিয়ে দেই। আর দু’টাকা আমার নিকট অবশিষ্ট থেকে যায়। এই দু’টাকা আমি কোথায় খরচ করব সে জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না।
আর আপনি যে আমাকে এত টাকা দিতে চাচ্ছেন তা আমি কোথায় খরচ করব?’
সুবহান-আল্লাহ
হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) -এর দুনিয়া বিমুখ এ উত্তর পেয়ে নবাব এত বেশি প্রভাবিত হন যে, নবাব সাহেব হযরতের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য চলে আসেন।
নবাব সাহেব ফিরে যাওয়ার সময় এক থলে রৌপ্য মুদ্রা হযরতের সমীপে হাদীয়া স্বরূপ পেশ করেন। হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) তা গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানান। এবং পূর্বোক্ত উজর পেশ করেন।
ফলে নবাব সাহেব ফেরার পথে হযরতের পাদুকাযুগলের মধ্যে ঢেলে দিয়ে চলে যান।
.পরে মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) জুতা পরিধান করতে গিয়ে দেখেন জুতার মধ্যে টাকার ঢেড় পড়ে আছে।
এ অবস্থা দেখে জুতা ঝেড়ে টাকাগুলো ফেলতে ফোলতে বললেন –
“এই দেখ! আমরা দুনিয়াকে এত উপেক্ষা ও তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য করি তবুও তা শেষ পর্যন্ত আমাদের জুতায় এসে পড়ে থাকে।”
এই বলে তিনি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলেন।
আর একটি বারও তিনি ঐ টাকাগুলোর দিকে ফিরে তাকালেন না।
এরকম খালেস, নিঃস্বার্থ ও একজন দুনিয়া বিমুখ আলেম এখন খুব কমই আছে।
এক মাসে কোরআন মুখস্থ:
কাসেম নানুতুবি রশিদ আহমাদ গাংগুহির সাথে হজ্জের সফরে গেলেন। সেই কাফেলায় কোন হাফেজে কোরআন ছিলো না। রমজান মাস চলে এলো। এ সময় তিনি প্রতিদিন এক পারা করে কোরআন মুখস্ত করে রাতে তারাবীহতে পড়তেন।
এভাবে মাত্র এক রমজানে তিনি পবিত্র কোরআনের হাফেজ হয়ে গেলেন।
এনারাই আমাদের পূর্বপুরুষ। তাদের মত
মহান আল্লাহ আমাদের ও কবুল করুন।আমিন
আরো পড়ুন:
সুত্র:
সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস (৭ম খণ্ড) (হার্ডকভার)। ঢাকা, বাংলাদেশ: مكتبة الحراء (মাকতাবাতুল হেরা)। ২০১৬। পৃষ্ঠা 608।