কেগেল ব্যায়াম | ক্যাগেল এক্সারসাইজ | পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ

বিসমিল্লাহ,
আজকের আলোচনা কেগেল ব্যায়াম | ক্যাগেল এক্সারসাইজ | পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ নিয়ে। এটা খুব চমৎকার একটি ব্যায়াম। যাদের প্রস্রাবের সমস্যা আছে, যেমন প্রস্রাবের একটু পরই আবার বেগ পাওয়া, অল্প সময়ও প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারা, হাঁচি বা কাশির সময় প্রস্রাব বের হওয়া থেকে শুরু করে, বিবাহিতদের দ্রুত বীর্যপাত, লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যা ইত্যাদির জন্য এটি উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

কেগেল ব্যায়াম | ক্যাগেল এক্সারসাইজ | পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ

বয়স বাড়লে, মহিলাদের সন্তান প্রসবের পরে, স্থুলতা বা ওজন বৃদ্ধি হলে, পুরুষ ও মহিলাদের বিভিন্ন সার্জারীর পরে, দীর্ঘমেয়াদী কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রায়ই ভারী বোঝা বহন করলে, অতিরিক্ত হস্তমৈথুন ইত্যাদি নানা কারণে এই সমস্যাগুলো হতে পারে।

আপনি এই সমস্যাগুলোর কোন একটি বা কয়েকটিতে ভুগলে ক্যাগেল ব্যায়াম করতে পারেন। বর্তমানে কোন ডাক্তারের চিকিৎসাধীন থাকলে ডাক্তারকে জানিয়ে পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করতে পারেন। যারা পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত ছিলেন তাদের অধিকাংশের দ্রুত বীর্যপাত, লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যা বেশ কমন।

তারা তাওবা তো করবেনই, এরপর এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্যাগেল ব্যায়াম করতে পারেন।

 

KEGEL EXERCISE | ক্যাগেল এক্সারসাইজ

১৯৪৮ সালে অ্যামেরিকান গাইনোকলজিস্ট আর্নল্ড ক্যাগেল প্রথম এই ব্যায়ামের ব্যপারে ধারণা দেন যাতে সার্জারী ছাড়াই মহিলাদের প্রস্রাব লিক করার সমস্যা সমাধান করা যায়। এখন এই ব্যায়ামটি পুরুষ মহিলা সবার জন্যই সাজেস্ট করা হয়ে থাকে।
ক্যাগেলের ব্যাপারে সহায়তার জন্য নেটে প্রচুর আর্টিকেল পাবেন।

ভিডিও আছে ইউটিউবে, প্লে স্টোরে ক্যাগেল ট্রেনিং হেল্পার অ্যাপও পাবেন। লস্টমডেস্টির ( lostmodesty.com ) কিছু ভাই বাংলায় একটা চমৎকার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ বানিয়েছেন, সেটি আপনাকে ক্যাগেলের ব্যাপারে সাহায্য করবে। আপনাদের জন্য পরামর্শ হল এই অ্যাপ ডাউনলোড করে অ্যাপে দেখানো নিয়মে ক্যাগেল করবেন।

অ্যাপটি ইন্সটলের সময় Unknown Sources থেকে ইন্সটলের অনুমতি দিয়ে নিবেন।

অ্যাপ ডাউনলোড লিংক-
লিংক-১

অনেক মানুষ এই ব্যায়াম ঠিকমতো করতে পারেন না তাদের পেলভিক মাসল খুজে না পাওয়ার কারণে। তাই প্রথমে আপনাকে সঠিক মাসল বা পেশী খুঁজে বের করতে হবে।

এমনিতে এই পেশী খুঁজে বের করা অসম্ভব কিছু না। তবে আপনি কনফিউসড হলে একজন ইউরোলজিস্টের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন।

কিভাবে সঠিক পেশী খুঁজে পাবেন?

প্রথমে বাতকর্ম(পাদ) আটকানোর চেষ্টা করুন। এখানে যে মাসলটি আপনাকে হেল্প করছে সেটাই কাঙ্খিত পেশী। অথবা প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাব আটকিয়ে ফেলুন (তবে বার বার এমনটা করবেন না)। পেটের নিম্ন ভাগে পিছনের দিকে যে পেশীগুলো আঁটসাঁট হয়ে গেলো সেগুলোই পেলভিস ফ্লোর মাসল অর্থাৎ শ্রোণী মেঝের পেশী।

ইউটিউবে এই পেশী চিহ্নিত করা নিয়ে অনেক ভিডিও পাবেন। যদি সঠিক পেশী চিহ্নিত করতে পারেন তাহলে দেখবেন শ্রোণীর সামনের চেয়ে পেছনের দিকে বেশি অংশে চাপ অনুভব করছেন। অ্যাপে ছবিতে পেশীর অবস্থান দেখানো আছে। তবে এটি একটু কঠিন কাজ। ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে করার চেষ্টা করবেন। ভুল পেশীর ব্যায়াম করলে ফল পাবেন না।

 

কিভাবে করবেন KEGEL EXERCISE | ক্যাগেল এক্সারসাইজ ?

 

ক্যাগেল দুই প্রকার- ক্লাসিক ক্যাগেল, পালস ক্যাগেল। অ্যাপে এসব বিস্তারিত পাওয়া যাবে। ব্যায়াম করার আগে ঠিকমতো প্রস্রাব করে মুত্রথলি খালি করে নেবেন। প্রথম দিকে উচিত হবে মেঝেতে শুয়ে শুয়ে এই ব্যায়াম করা।

ক্লাসিক ক্যাগেলের জন্য শুয়ে পেলভিস ফ্লোর মাসল ৩ সেকেন্ড চেপে ধরে রাখুন, তারপর ৩ সেকেন্ড স্বাভাবিক। এভাবে টানা ১০বার চেপে রাখবেন আর ১০বার সংকুচিত করবেন। ট্রেইনার অনুযায়ী এই সংখ্যা দিনদিন বাড়াবেন। সংকোচন বা চেপে ধরা বলতে প্রসাব/পাদ আটকানোর মত অবস্থা সিমুলেট করতে বলা হচ্ছে।

আর পালস ক্যাগেলের জন্য একবার খুব দ্রুত চেপে ধরবেন/সংকুচিত করবেন আর তারপরেই শিথিল করবেন। এভাবে অ্যাপে দেখানো সময় অনুযায়ী করতে থাকবেন। মাসল ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে শুরু করলে বসে, দাঁড়িয়ে বা যেকোনো অবস্থায় করতে পারবেন।

কেগেল ব্যায়ামে কখন ফলাফল পাবেন?

নিয়মিত ক্যাগেল ব্যায়াম করলে ৩ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাবের সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে।

লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা সমাধান হতে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দ্রুত বীর্যপাতের ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। টানা সুবিধা লাভ করার জন্য পরামর্শ হল নিয়মিত ব্যায়াম করে যাওয়া।

কতবার করে করবেন?

অ্যাপের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন ২/৩ সময়ে (যেমন সকালে দুপুরে বিকেলে) চেষ্টা করবেন। তবে অ্যাপে দেখানো সময়ের চেয়ে বেশি করবেন না, এতে আপনার টিস্যুতে ইনজুরি হতে পারে অতিরিক্ত ব্যায়ামের জন্য।

লেভেল ১০ এর পরে প্রতিদিন ১ বার করে করলেই হবে মেইনটেইনের জন্য। লেভেল ১০ এর আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ৩ সময়ে করতে পারেন। মাঝে মাঝে অন্য কাজের সময় এটা প্র্যাকটিস করে নিতে পারেন।

 

কেগেল ব্যায়াম সতর্কতাঃ

 

  • ১। ক্যাগেল একবার শুরু করলে নিয়মিত করে যেতে হবে। নাহলে ফলাফল পাবেন না।
  • ২। সত্যি সত্যি প্রস্রাব করার সময় এ ব্যায়াম করবেন না। প্রসাবের চাপ থেকে সম্পূর্ণ খালি হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় কাল্পনিক প্রস্রাব আটকানোর চেষ্টা করবেন।
  • ৩। ২ মাস ক্যাগেল করার পরেও কোন ফল না পেলে আর করবেন না। আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
  • ৪। ভালো ফলাফলের জন্য যখন পেশি সংকোচন করবেন তখন গভীর ভাবে মনোযোগ দিয়ে করবেন। অনেকেই ভুল করে পেটের বা তলপেটের, উরু, এবং নিতম্বের পেশী সংকোচন করে ফেলেন। সব সময় মনে রাখবেন ব্যায়ামের সময় শুধু পেলভিক মাসল সংকোচন করবেন, অন্য সকল পেশী একদম স্বাভাবিক থাকবে।
  • ৫। ব্যায়ামের সময় দম বন্ধ বা ধরে রাখবেন না। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখবেন। যদি ব্যায়াম করার সময় ব্যাথা অনুভব করেন তাহলে বুঝবেন সঠিক পেশীতে হচ্ছে না ব্যায়াম। আর কখনো অতিরিক্ত করবেন না তাহলে পেশীগুলো ক্লান্ত হয়ে লক্ষ্য সাধনে ব্যর্থ হবে।
  • ৬। ব্যায়াম শুরু করার পুর্বে অবশ্যই সকল প্রকার পর্ণোগ্রাফি এবং হস্তমৈথুন থেকে নিজেকে মুক্ত করবেন। ব্যায়াম করে ফল লাভ হল কিনা সেটা দেখার জন্য কখনোই হস্তমৈথুন করবেন না। বাস্তব যৌনতা এবং হস্তমৈথুন এক বিষয় নয়। ব্যায়ামের বিষয়ে সতর্কতা অ্যাপের ইনফো জোনে দেয়া আছে।
  • ৭। ব্যায়াম করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে সাহায্য চাইতে কার্পণ্য বা লজ্জা করবেন না। নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন যাতে তারা আপনাকে সঠিক পেশী সনাক্তকরণ এবং ব্যায়ামের পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে বায়োফিডব্যাক প্রশিক্ষণ সাহায্য করতে পারে। এই ধরণের সেশনে, ডাক্তার বা অন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা মলদ্বার দিয়ে একটি মনিটরিং প্রোব প্রবেশ করিয়ে পুরো ব্যাপারটা মনিটরে পর্যবেক্ষণ করেন। পেলভিস ফ্লোর মাসল সংকোচন করার পর একটা মনিটরে দেখা যাবে যে আপনি সঠিক পেশী সংকুচন করতে পারছেন কিনা, এবং পারলে কতক্ষণ পারছেন।

আরো পড়ুন:

Related Posts

Add Comment

You cannot copy content of this page