মায়াজমের (Miasm) পরিচয়ঃপর্ব দুই
ডাঃ রাজীয়া সুলতানা হাফসা
মায়াজম নিয়ে লেখার আজ দ্বিতীয় পর্ব।
আমাদের একটা ভুল ধারণা হলো সোরা একটি মায়াজম কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সোরা মায়াজম নয়- একটি মায়াজমেটিক অবস্থা । যা সোরিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্ট। অনুরূপ ভাবে সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজম নয়- সিফিলিটিক ও সাইকোটিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্ট মায়াজমেটিক অবস্থা ।
মহাত্মা হ্যানিম্যান তার “ক্রনিক ডিজিজ ” গ্রন্থে সোরা,সিফিলিস ও সাইকোসিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
হোমিওপ্যাথিক মতে, Pseudo chronic diseases (সিউডো ক্রনিক ডিজিজ ) ও Artificial chronic diseases (আর্টিফিশিয়াল ক্রনিক ডিজিজ) ছাড়া আর সব পুরাতন রোগ সোরা,সিফিলিস ও সাইকোসিস এর অন্তর্ভুক্ত।
সোরা (psora)
হ্যানিম্যান তার ক্রনিক ডিজিজ গ্রন্থে লিখেছেন- সোরার মায়াজম সোরা ভেসিকল (psora vesicle) এর রসের মধ্যেই থাকে।
কোনভাবে ঐ রস সুস্থ মানুষের চামড়ায় লাগলে সোরা শরীরে প্রবেশ করে।
এই রস লাগার ছয়,আট,দশ বা চৌদ্দ ঘন্টা পর প্রথমে শীত শীত লাগে এরপর সন্ধ্যার দিকে শরীর খুব গরম এবং জ্বর জ্বর লাগবে। এই ভাব সারারাত থাকবে এবং সকালে ঘাম হবে।
এবং সবশেষে উদ্ভেদ দেখা দিবে। সুতরাং দেখা যায় যে সোরা স্পর্শ মাত্রই সংক্রমিত হয় না- রোগ সংক্রমিত হতে কিছুদিন সময় লাগে।
মায়াজমের (Miasm) পরিচয়ঃপর্ব দুই
উদ্ভেদ দেখা দেওয়া কে সোরার প্রথমিক পর্যায় বলা যায়। এই উদ্ভেদ গুলো প্রচন্ড চুলকায় এবং চুলকানোর পর জ্বলে।
যদি এই উদ্ভেদ উপযুক্ত এন্টি সোরিক দ্বারা চিকিৎসা না করে অসদৃশ চিকিৎসায় চাপা দেওয়া হয় তবে স্হানীয় লক্ষণ চাপা পড়ে সুপ্ত অবস্থায় থাকবে। একে সোরার সুপ্ত দশা বলা হয়।
পরবর্তী তে অনুকূল পরিবেশে সোরা বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
সামান্য উদ্ভেদ থেকে যার সৃষ্টি, বর্তমান যুগে সেই রোগ থেকে মুক্ত থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই হ্যানিম্যান বলেছেন, সোরা মুক্ত লোক পৃথিবীতে বিরল বা নেই বললেই চলে।
সুপ্ত সোরার কিছু লক্ষণ(Symptoms of Latent Psora):
১) মানসিক দিক থেকে খুবই সচেতন, ভয়,দুশ্চিন্তা ও দুর্বাবনা গ্রস্হ, অল্পতেই রেগে যায়।
২) অল্পতেই দৈহিক ও মানসিক অবসাদ।
৩) হাত ও পায়ের তলায় জ্বালা ও ঘাম।
৪) ঘুমের মধ্যে পেশী সমূহ লাফানো।
৫) শীত কাতরতা ও অল্পতেই ঠান্ডা লাগা।
৬) ভিতরে ও বাইরে গরম পছন্দ করা।
৭) মাঝে মাঝে নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
৮) ঘুমের মধ্যে দাঁত কাটা ও মলের সাথে বড় কৃমি বের হওয়া।
৯) মিষ্টি, টক,ভাজা এবং চর্বি জাতীয় খাদ্য পছন্দ।
১০) ঘুমের মাঝে অস্থিরতা।
১১) স্নানে অনিচ্ছা, অপরিষ্কার থাকার ইচ্ছা।
১২) সারাদিন রাত্রি শুয়ে থাকার ইচ্ছা ও তাতে উপশম বোধ করা।
১৩) প্রচন্ড ক্ষুধা, বিশেষ করে সকালে।
১৪) স্বাভাবিক স্রাব যেমন-ঘাম,প্রস্রাব, মাসিকের রক্তস্রাব ইত্যাদিতে উপশম বোধ।
১৫) ঘুমের সময় মাথায় ঘাম হওয়া।
১৬) মাঝে মাঝে নাক,চোখ,মুখ গরম হওয়া।
১৭) সবসময় গলায় কফ জমা থাকা
এছাড়াও আরও অনেক লক্ষণ রয়েছে। তবে এই লক্ষণগুলি জানা থাকলে সুপ্ত সোরা চিনতে কোন অসুবিধা হবে না।
পরবর্তী পর্বে থাকছে সোরার প্রকাশ্য (দ্বিতীয় দশার) লক্ষণ এবং তার চিকিৎসা।
আরো পড়ুন:
মায়াজমের (Miasm) পরিচয়ঃপর্ব এক
পর্নোগ্রাফির মরণকামড় থেকে মুক্তির উপায়
হস্তমৈথুনের চিকিৎসায় প্রধান ঔষধ
হোমিও সদৃশ্য ১২টি বায়োকেমিক ঔষধের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
All Homeopathic Medical College Address & College Code

