কফ কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

কফ কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা –হোমিওপ্যাথিতে কফ/ কাশি (Cough)-র চিকিৎসা । সচারচর কাশি নিজে কোন স্বতন্ত্র পীড়া নহে; নানা প্রকার বক্ষ পীড়ার লক্ষণ যা আনুসঙ্গিকভাবে বর্তমান থাকে।

শ্বাসনালীর উত্তেজনা বা শ্বসনালী কিংবা ফুসফুসের পীড়া বশতঃ সেখানকার শ্লেষ্মাদি বের করে দে’য়ার জন্য অথবা ঠান্ডা লেগে গলার মধ্যে এক প্রকার অসস্তিকর কুট-কুটির কারণে কাশি হয়ে থাকে।

অনেক সময় যকৃত বা জরায়ু পীড়ার উত্তেজনা বশতঃ এ পীড়া হয়। কাশি অনেক প্রকারের থাকলেও, প্রধানতঃ দুই প্রকার।

কফ কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

কাশলে যদি শ্বাস পথে কোন তলল পদার্থ না থাকে তাহেল তাকে শুষ্ক কাশি বলে।

আবার কাশলে শ্বাসপথে শ্লেষ্মা জাতীয় তরল পদার্থ বের হয় তাকে আদ্র বা ভিজা বা সরল কাশি বলে।

হোমিওপ্যাথি ওষুধের নাম ও কাজ

 ব্রায়োনিয়াঃ সর্দির সঙ্গে মাথাধরা থাকে, টিপলে আরামবোধ। সর্দি বসে গিয়ে মাথাব্যথা। নাকের শুষ্কতা, জ্বর-জ্বরভাব, গাত্রবেদনা। রোগীর কোষ্টবদ্ধের ধাত, পিপাসা।

ঘর্মে উপশম। ইহার দ্বারা সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বরের বহু রোগী আরোগ্য হয়েছে। কাশবার সময় বুকে ও মাথায় বেদনা। কোষ্ঠবদ্ধতা। নড়লে চড়লে কাশির বৃদ্ধি। বুকের বেদনাতে মনে হয় সূচফোটান হচ্ছে।

তৃষ্ণা। শুষ্ক কাশিতে, জ্বরের বেগ বেলেডোনা দেওয়ার পর কমে গেলে এতে ভাল ফল পাওয়া যায়। কাশির বহু রোগী এই ঔষধের দ্বারা আরোগ্য হয়।

 জাস্টিসিয়া আধাঃ: এই ভারতীয় ঔষধটির ৬x সাধারণ সর্দি, হাঁচি, কাশিতে খুবই উপকার করে দেখেছি।

 একোনাইট ন্যাপঃ সদির্র প্রথম অবস্থায় ব্যবহার্য। শুষ্ক ঠান্ডা বা শীতকালের ঠান্ডা লেগে হঠাৎ সর্দি, তৎসহ জ্বর-জ্বরভাব। নাকে মাঝে মাঝে শুষ্ক ভাব। পিপাসা। বর্হিবায়ুতে আরামবোধ। কয়েক মাত্রা নিম্ন শক্তির একোনাইট দিয়ে পরে ২/১ মাত্রা সালফার দিলে রোগী আরোগ্য হয়ে যায়।

হঠাৎ জ্বর, সর্দি ও কাশি আক্রমন করে, অত্যন্ত অস্থিরতা ছটফটানি, ঘন ঘন বেশি পরিমানে পানি পান, মৃত্যু ভয় থাকে। বাঁচবেনা বলে মত প্রকাশ করে। সুতরাং আকিষ্মিকতা ও রোগে প্রচন্ডতা আকোনাইটের বৈশিষ্ট্য।

এরালয়া-রেসিঃ হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দমকা কাশি, কাশতে কাশতে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে, কাশি কিছুতেই কমে না, কাশির সময় ও পূর্বে গলা সুড়-সুড় করে।

 অ্যান্টিম টার্টঃ নিম্নশক্তি অর্থাৎ ৩x বিচূর্ণ ব্যবহার্য। বক্ষ শ্লেমায় পূর্ণ অথচ কাশলে ওঠে না।

বুক ঘড়ঘড় শব্দ। নিদ্রালু, পিপাসাহীনতা, কপালে শীতল ঘর্ম। এর উচ্চশক্তিতে কফ বসে গিয়ে রোগীকে কষ্ট দেয়।

 আর্সেনিকঃ কাশি বা হাঁপানি বেলা বা রাত্র ১২ টা থেকে ২ টার মধ্যে ভীষণ বৃদ্ধি শ্বাসকষ্ট উঠে বসলে উপশম। শুলে বৃদ্ধি। হাঁপানীতে ইহা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, এর পর লক্ষনানুসারে নেট্রাম সালফ বা থুজা ব্যবহার করে বহু রোগী স্থায়ীভাবে আরোগ্য করেছি।

অতিরিক্ত হাঁচি থাকলে এই ঔষধ বেশ কাজ করে। অস্থিরতা, শীতশীতভাব, সর্দিগর্মি। উত্তাপে রোগের উপশম, তৃষ্ণা যথেষ্ট কিন্তু পানি ভাল লাগেনা। পাতলা সর্দি ইহার একমাত্রাতে ঘন হতে দেখেছি।

 ক্যালেকিরয়া কার্বঃ ষ্ক্রোফুলা ধাতু। কাশতে কশতে হরিদ্রভ শ্লেষ্মা বের হয়।

রাত্রে শুষ্ক কাশি, দিনে নরম। বুকে টাটানি ব্যথা। রোগচিত্র মিললে ইহা কাশি বা হাঁপানির পুরাতন অবস্থায় একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ (পরীক্ষীত)।

 ক্যাপসিকামঃ কাশতে মাথা বা শরীরের অন্যান্য দূরবর্তী স্থানে ব্যথা। মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।

কফ কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করার আরো কিছু ওষুধ

 চেলিডোইনয়ামঃ কশবার সময় শ্লেষ্মায় ঠেলা গলা থেকে লাফিয়ে দুরে বের যায়। ডানধারে স্কন্ধের নিচে অভ্যন্তর প্রদেশে বেদনা এই ভেষজের বিশিষ্ট লক্ষণ।

 সিনাঃ খিটখিটে মেজাজের শিশু, কৃমির ধাতু। নাক চুলকানি, গুহ্যদ্বার চুলকানি, গুহ্যদ্বার চুলকানি, অস্থির নিদ্রা। সতত কাঁদে, বায়না করে। কখনও অক্ষুধা। কথা বলতে বা নড়তে কাশির বৃদ্ধি।

অনেক শিশুরোগী আরোগ্য করেছি।

হিপার সালফারঃ আপেক্ষিক কাশি বা হাঁপানি। ভোর রাত্রে বৃদ্ধি। যতই বেলা হয় ততই রোগের উপশম। শ্লেষ্মায় ঘড় ঘড় শব্দ। এই ঔষধে বুকে অতিরিক্ত কফ জমানো প্রবৃত্তি নষ্ট হয়।

হাঁপানি ও কাশির উৎকৃষ্ট ঔষধ। সামান্য ঠান্ডাতে রোগ বৃদ্ধি।

 ইগ্নেশিয়াঃ যতই কাশে ততই মনে হয় কাশির বৃদ্ধি হচ্ছে। পরিবর্তনশীল মেজাজী রোগীএদর পক্ষে উত্তম। শোকতাপের ইতিহাস।

কেলি কার্বঃ বুকে ছুঁচফোটার মতো ব্যথা। বাম দিকে শুলে কাশির বৃদ্ধি। ঘর্মপ্রবণতা, দুর্বলতা ও কোমর ব্যথা। ভোরে ২-৪ টার মধ্যে রোগবৃদ্ধি।

এতেও বহু শীতকাতর পুরাতন কাশি ও হাঁপানি রোগী আরোগ্য হয়েছে। এতে মাঝে মাঝে রোগ বৃদ্ধি করে। ধৈয্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়।

ল্যাকেসিসঃ স্রাবে উপশম। সামান্য একটু শ্লেষ্মা বের হলে কাশি বা হাঁপানির উপশম। নিদ্রার মধ্যে বা পরে কাশি বা হাঁপানির বৃদ্ধি হলে ইহা অব্যর্থ। বহু রোগী আরোগ্য করেছি। স্পঞ্জিয়াতে নিদ্রান্তে বৃদ্ধি আছে।

লাইকোপোডিয়ামঃ বৈকাল ৪-৮টার মধ্যে বৃদ্ধি। এই লক্ষণ ধরে বহু কাশির রোগী আরোগ্য করেছি।–নন্দী। রোগী ঠান্ডা চায় কিন্তু খাদ্যদ্রব্য বা পানীয় গরম হওয়া চাই। কোষ্টবদ্ধতা ও পেটে বায়ু। ক্ষধা অথচ সামান্য আহারে যেন দমশম হয়ে যায়।

ম্যাঙ্গেনামঃ শুলেই কাশির উপশম।

 মার্কসলঃ একসঙ্গে দুটি কাশি। এ লক্ষণ ধরে আমার নিজের কষ্টকর কশি আরোগ্য করেছি।–নন্দী। রাত্রে শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধি। ঘর্মে উপশম না হওয়া বশিষ্ট্য। মুখে দুর্গন্ধ। লালাস্রাব রাত্রে ঘুমের মধ্যে। রোগী বামপার্শ্ব ভিন্ন শুতে পারে না। ডানপার্শ্বে শুএল কাশির বৃদ্ধি।

 নেট্রম সালফঃ কাশবার সময় রোগী হাত দিয়ে বুক ধরে। নচেৎ কাশতে কাশতে বক্ষে কষ্ট পায়। বুকে শ্লেষ্মা যথেষ্ট। কাশবার সময় মাথায় ব্যথা। সাইকোটিক ধাতু। বর্ষাকালে কাশি ও হাঁপানিতে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।

 নাক্স ভমিকাঃ অজীর্ণতা হেতু পেট গরম হয়ে কাশি বা হঁপানি। প্রাতে ও আহারের পর বৃদ্ধি কোষ্ঠবদ্ধতা, নিষ্ফল মলপ্রবৃত্তি। মেজাজ খিটখিটে।

কাশির সময় বুকে ভারবোধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

ফসফরাসঃ কাশবার সময় বুকে ভারবোধ। পিপাসা। বাম পার্শ্বে শুলে বাশির বৃদ্ধি। শুষ্ক কাশি। গলা সুড়সুড় করে কাশি। হাসতে, কথা বলতে কাশির বৃদ্ধি। সন্ধায় বৃদ্ধি। এতে অনেক পুরাতন কাশি রোগীর আরোগ্য হয়েছে।–নন্দী। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয়ের ইচ্ছা হলে ইহা ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়াতে প্রায়ই বিফল হয় না।(পরীক্ষিত)।

 পালেসিটলাঃ কাশি যখন নরম হয় তখন শ্লেষ্মা তিক্ত হয়। ঋতুস্রাব পরিস্কার না হলে কাশির বৃদ্ধি। রোগী শৈত্যপ্রিয়। মৃদু স্বভাবের। মুক্ত হওয়াতে কাশির উপশত। গরম ঘরে বৃদ্ধি। পিপাসাহীন।

 সোরিনামঃ প্রতি বৎসর শীতকালে কাশির বৃদ্ধি। চর্মরোগ প্রবণতা। সমস্ত স্রাবে দুর্গন্ধ, ঠান্ডা লাগার প্রবণতা। রোগী প্রায় সর্দি কাশিতে ভোগে। এর পর টিউবারকুইলিনাম ব্যবহার করে বহু পুরাতন সর্দি কাশির রোগী আরোগ্য করে

 রিউমেক্সঃ মুখ দিয়ে সামান্য বাতাস ঢুকলে কেই কাশির বৃদ্ধি। তাই রোগী মুখ রুমাল দিয়ে বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে। এরূপ লক্ষণে খু্বই কষ্টকর কাশি আরোগ্য হয়।

স্যাঙ্গুইনেরিয়াঃ শ্লেষ্মায় অতিরিক্ত গন্ধ থাকলে ইহা ব্যবহার্য। শুষ্ক কাশি। বহু নিঃসরণে কাশির উপশম। কাশির জন্য উঠে বসেত হয়।

Related Posts

No Responses

Add Comment

You cannot copy content of this page