গরু কোরবানি বিরোধী হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দের করুণ পরিণতিঃ

গরু কোরবানি বিরোধী হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দের করুণ পরিণতিঃ

সালটি ছিলো ১৩৪৪ ঈসায়ী। তৎকালীন বাংলাদেশের সিলেটে হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দের রাজ্যের এক মহল্লায় ১৩টি মুসলিম পরিবার বাস করতেন।

তারই একজন ছিলেন শেখ বুরহান উদ্দিন।

তিনি  হিন্দু যালিম রাজা গোবিন্দের কারণে গোপনে ইবাদত-বন্দেগী করতেন।

কারণ সেখানে প্রকাশ্যে মুসলমানদের জন্য ইবাদত-বন্দেগী করা নিষিদ্ধ ছিলো। কেউই গরু জবাই ও কুরবানী করতে পারতো না।

শেখ বুরহান উদ্দিনের কোনো সন্তান ছিলো না।

সন্তানের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করে তিনি নিয়ত করলেন- যদি তার একটি সন্তান হয় তাহলে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ মহান আল্লাহ পাক উনার নামে একটি গরু কুরবানী করবেন।

কিছুদিন অপেক্ষার পর সত্যি সত্যিই ঘর আলো করে একজন ফুটফুটে সন্তান জন্ম নিলো।

খুশি হয়ে বুরহানুদ্দীন শুকরিয়া করে নিয়ত মুতাবিক একদিন গোপনে একটি গরু কুরবানী করে গোশত মুসলমানদের মধ্যে বিলি করতে লাগলেন।

এমন সময় একটি চিল এসে ছোঁ মেরে এক টুকরা গোশত নিয়ে গেলো।

মহান আল্লাহ পাক উনার কি কুদরত, চিলটি গোশত টুকরাটি ফেললো যবন গোবিন্দের মন্দিরের প্রধান প্রবেশ পথে।

গোবিন্দ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সৈন্য পাঠিয়ে শেখ বুরহান উদ্দিনকে রাজার সামনে উপস্থিত করলো।

যালিম হিন্দু রাজা গোবিন্দ বুরহান উদ্দিনের ডান হাত কেটে দিলো। নিষ্পাপ সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটিকে কথিত দেবতার সামনে বলি দিলো।

এ অবস্থা দেখে শিশুটির মা অর্থাৎ শেখ বুরহান উদ্দিনের স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে মৃত্যু বরণ করলেন।

শুধু এতটুকুই নয়, ওই যালিম গোবিন্দ ওই দিনই আক্রমণ চালিয়ে ওই এলাকার সকল মুসলমানদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করে ফেললো। নাউযুবিল্লাহ!

গরু কোরবানি বিরোধী হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দের করুণ পরিণতিঃ

অত্যন্ত ব্যথিত অন্তরে শেখ বুরহান উদ্দিন পায়ে হেঁটে উপস্থিত হলেন সোনারগাঁয়ে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের দরবারে।

ইলিয়াস শাহ সব শুনে যালিম হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দকে শাস্তি দেয়ার জন্য সৈন্য-সামন্ত পাঠালেন যুদ্ধ করার জন্য।

বেশ কিছুদিন যুদ্ধ হলো, শত শত মুসলিম সৈন্য শহীদ হলো। কিন্তু জয় করা হলো না।

এরপর শেখ বুরহান উদ্দিন রওয়ানা হলেন দিল্লির পথে। দিল্লির সম্রাট আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ তুঘলকের সামনে।

তিনি বুরহান উদ্দিনের নিকট হতে সব বিষয় শুনে যবন গোবিন্দকে শায়েস্তা করার জন্য সৈন্যসহ সিকান্দার গাজীকে সেনাপতি করে অভিযানে পাঠালেন।

কিন্তু পথিমধ্যে অনেক প্রতিকূলতার কারণে তারা দিল্লিতে ফিরে গেলেন। অতঃপর নতুন কিছু সৈন্যসহ আর একজন বীর সাইয়্যিদ নাসির উদ্দিনকে সেনাপতি করা হলো।

সম্রাটের আদেশ পেয়ে তিনি দোয়া নিতে গেলেন তাঁর পীর শায়েখ হযরত খাজা নিজাম উদ্দিন রহঃ এর দরবারে। তখন ওখানেই অবস্থান করছিলেন হযরত শাহ জালাল রহঃ ।

সবকিছু শুনে হযরত শাহ জালাল রহঃ সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনিও সাইয়্যিদ নাসির উদ্দিনের সাথে এই অভিযানে যাবেন।

অতঃপর হযরত শাহ জালাল রহঃ তাঁর ৩৬০ জন সঙ্গীদের নিয়ে সাইয়্যিদ নাসির উদ্দিনের সৈন্যবাহিনীর সাথে রওয়ানা দিলেন।পথিমধ্যে গৌর গোবিন্দের সৈন্যদের সাথে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।

ওলীয়ে কামিলগণ উনাদের দোয়া, মহান আল্লাহ পাক উনার গায়েবী মদদ এবং হযরত শাহজালাল রহঃ এর রূহানিয়তের নিকট গৌর গোবিন্দের যাদুমন্ত্র অকার্যকর হয়ে তার বাহিনীর চরম পরাজয় হলো।

নিহত হলো গোবিন্দের সেনাপতি মনা রায়।

মুসলিম বাহিনী অগ্রসর হতে থাকলো গৌর গোবিন্দের রাজধানী অভিমুখে।

সুরমা নদী পার হয়ে মুসলিম বাহিনী যখন প্রাসাদের নিকটবর্তী হলো এতে হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দ প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে যায়।মুসলমানগণ গৌর গোবিন্দের প্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে আযান দিতে লাগলেন।

আযানের ধ্বনিতে গোবিন্দের প্রাসাদ ও মন্দির ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ধ্বংস হয়ে গেলো।উদিত হলো নতুন সূর্য।

উড়তে লাগলো ইসলামের পতাকা। গৌর গৌবিন্দের রাজ্যের নতুন নাম হলো ‘জালালাবাদ’।
আল্লাহু আকবার ।

আরো পড়ুন:

Related Posts

No Responses

Add Comment

You cannot copy content of this page