ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ|ডেঙ্গুর লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ|ডেঙ্গুর লক্ষণ:ডেঙ্গু যে মহামারি আকার ধারণ করেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিভিন্ন জায়গা থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হল, ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার জন্য যেসব সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে, সেগুলো আমরা সবাই মোটামুটি দেখেছি।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নিচের বিষয় গুলো সকলের জানা দরকার।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ|ডেঙ্গুর লক্ষণ

এই বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৩,৫০,০০০ মানুষ । ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ।এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে ।প্রতি বছর প্রায় অর্ধ মিলিয়ন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তবে বেশিরভাগ রোগীই দুই থেকে সাত দিনের ভিতরে সুস্থ হয়ে যায় ।ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রতিরোধ নিয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো ।

এডিস মশা

 

এডিস মশা : এডিস মশা প্রাথমিকভাবে দিনে বেশী  কামড়ায়। এই প্রজাতির মশা সূর্যোদয়ের প্রায় দু ঘন্টা পরে এবং সূর্যাস্তের কয়েক ঘন্টা আগে সর্বাধিক সক্রিয় থাকে, তবে এটি রাতের বেলায় ও কামড়াতে পারে। এই মশাটি  পেছনের দিক থেকে, পায়ের গোড়ালি এবং কাঁধে বেশী কামড়ায়।

 

অন্যান্য নাম: ডেঙ্গু, ব্রেকবোন জ্বর

নিচের লক্ষণ গুলো দেখে সহজে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চেনা যায় ।  ডেঙ্গু  জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় সাধারণত সংক্রমণের তিন থেকে চৌদ্দ দিন পরে ।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ|ডেঙ্গুর লক্ষণ উচ্চ মাত্রার জ্বরের সাথে সাথে নিচের কম পক্ষে দুটি লক্ষণ মিলে গেলে বুজবেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন :

  • হঠাৎ,উচ্চ মাত্রার জ্বর হওয়া (১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে )
  • প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।
  • ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি ওঠা ।

    ডেঙ্গু জ্বর

    ডেঙ্গুর লক্ষণ

  • রক্তপাত হ​ওয়া।
  • প্রচন্ড চোখে ব্যাথা ।
  • বমি বমি ভাব হওয়া,পেট ব্যাথা এবং বদহজম ।
  • হাড় বা পেশীতে ব্যাথা হওয়া ।
  • গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ।
  • দ্রুত প্রেসার কমে যাওয়া ।

ডেঙ্গু জ্বর|ডেঙ্গুর লক্ষণ|ডেঙ্গুর বিপজ্জনক লক্ষণ :

  • সাংঘাতিক পেটে ব্যথা  ।
  • খিঁচুনি হওয়া।
  • শ্বাস  প্রশ্বাসে  অসুবিধা  ।
  • চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া   ।
  • রক্ত বমি অথবা বার বার বমি হওয়া।

ডেঙ্গুর লক্ষণ  অবহেলা করলে জ্বর বশী হতে পারে এমনকি মৃত্যুর কারণ ও হতে পারে।ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য কোন নির্দিষ্ট ঔষধ নেই।তাই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

কিভাবে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করতে পারি?

  • দীর্ঘ-আস্তিন যুক্ত শার্ট এবং দীর্ঘ প্যান্ট পরতে হবে।
  • BSTI নিবন্ধিত মশা প্রতিরোধী স্প্রে ব্যবহার করুন।
  • আপনি মশারী ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে পারেন।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে কী করবেন ?

১) খাঁটি নারিকেল তেলের সাথে ইবনে সিনা কোম্পানির হায়াত অথবা হামদর্দ কোম্পানির কুলজম মিশ্রিত করুন । মেশানোর অনুপাত হবে নারিকেল তেল ২ ভাগ + উল্লেখিত ওষুধ ১ ভাগ। এই মিশ্রণ হাত পা মুখমণ্ডল অর্থাৎ দেহের অনাবৃত অংশে চার ঘন্টা পর পর ( যখন মশারির বাহিরে থাকবেন তখন ) মেখে নিন। এতে ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে আপনি মোটামুটি অন্যদের চেয়ে নিরাপদ থাকবেন।

২) প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস লেবুর শরবত ও রাতে এক গ্লাস লেবুর শরবত খাবেন। এছাড়াও ভিটামিন সি যুক্ত সিজনাল ফল প্রতিদিন সাধারণ খাবারের সাথে রাখবেন। লেবুর শরবত গরম পানিতে খাবেন না অথবা গরম করবেন না , কারণ গরমে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। ভিটামিন সি খাবার ফলে অন্যদের চেয়ে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকবে এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আপনার শরীর প্রস্তুত থাকবে।

৩) প্রতিদিন সকালে একটা ও রাতে একটা স্পিরুলিনা ক্যাপসুল / ট্যাবলেট খান। বাজারে রেডিয়েন্ট কোম্পানির Pirulin , একমি কোম্পানির Acme’s Spirulina , ইবনে সিনা কোম্পানির ডিরুলিনা , স্কয়ার কোম্পানির Navit নামে স্পিরুলিনা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য আরো অনেক কোম্পানির আছে কিন্তু আমি যে কোম্পানি গুলো বললাম ,এই কোম্পানিগুলোর স্পিরুলিনা গুণগতমান ভালো। স্পিরুলিনা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য শরীর প্রস্তুত হয়ে যায়।

৪) প্রতিদিন সকালে ও রাতে 4-5 ফোঁটা কালোজিরা তেল + ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। (ডায়াবেটিস রোগীরা মধু খাবেন না । কালোজিরার তেল প্রোল্যাকটিন হরমোন অনেকক্ষেত্রে বাড়িয়ে দেয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পেটে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় তাই এ বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন )

আপনি যদি অসুস্থ বোধ করেন এবং মনে করেন আপনার ডেঙ্গু হয়ে থাকতে পারে তাহলে করনীয়:

  • Acetaminophen ব্যবহার করুন।
  • অ্যাসপিরিন এবং ibuprofen (অ্যাডভিল) ধারণকারী ব্যথার ঔষধ বা রিলিভার গ্রহণ করবেন না।এটা রক্তপাত ঘটাতে পারে।
  • প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে।
  • প্রচুর বিশ্রাম গ্রহন করুন।
  • প্রচুর তরল পানীয় পান করুন।
  • মশারী ব্যবহার করুন ।
  • ডেঙ্গুর বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা দিলে,দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে ।

কি খাবারে ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায় ?

  • পেঁপে : ডেঙ্গু জ্বর থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য সেরা খাবার পেঁপে।
  • ব্রোকোলি: ব্রোকোলি ভিটামিন কে এর একটি চমৎকার উৎস ।এটি রক্ত ​প্লেটলেট গুলি পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে।
  • আনার: আনারে আছে দারুণ প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং খনিজ যা শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি দিয়ে সবল করে তুলতে সাহায্য করে ।
  • শাক সবজী: শাক সবজীতে  প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই রয়েছ যা রক্তে আয়রণের মাএা বাড়ায়।
  • ফলের জুস : ডাবের পানি,কমলার রস বা জুস ।

রেফ্রিজারেটর ,ডাবের খোল, ফুলের টব,  টায়ার ইত্যাদি এগুলোর   ভিতরের জমানো পানি ফেলে দিলে মশা বংশ বিস্তার করতে পারবে না ।

জমানো পানি ফেলে দেই

বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । এভাবে এডিস মশা প্রতিহত করা সম্ভব ।

মশা প্রতিরোধী স্প্রে প্রয়োগ

আপনার ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করবেন ?

১) ডেঙ্গু জ্বর হোক বা না হোক জ্বর হলেই দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। এখন সিজন ভালো না জ্বর হলে নানা কারণে জ্বর হতে পারে ।

২) হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত অথবা চিকিৎসা শুরুর আগ পর্যন্ত বায়োকেমিক ওষুধ ট্যাবলেট ফেরাম ফস পাওয়ার বা শক্তি 6X , ( সকল হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানে পাবেন ) । চারটি করে ট্যাবলেট দুই ঘন্টা পর পর চুষে খেতে থাকুন। ( এই ওষুধ রাতে খাবেন না , রাতে খেলে ঘুম কমে যেতে পারে )

৩) রক্ত পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় রক্তের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে তাহলে সবুজ কয়েকটি এলাচির দানা মুখের ভিতর দুই গালে রেখে দিন। এর ফলে ব্লাড সেল ও প্লাটিলেট দ্রুত বাড়তে সাহায্য করবে।

৪) চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন তিন বেলা 30ml পরিষ্কার পেঁপে পাতার রস খেতে পারেন, এর ফলে ও রক্তের প্লাটিলেট দ্রুত বাড়তে সাহায্য করবে। তবে মাথায় রাখবেন পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট স্বাভাবিক অবস্থায় না খাওয়াই ভালো।

৫) ডেঙ্গু জ্বর হলে , তাই উপরে বর্ণিত নিয়মের সাথে সাথে প্রচুর তরল খাবার , পানিয় ও পানি পান করতে হয়, বিশ্রামে থাকতে হয়। এবং অবশ্যই চিকিৎসকের অধীনে থাকতে হয় কারণ হচ্ছে যে কোন মুহূর্তে জটিল অবস্থার তৈরি হলে যাতে জরুরি চিকিৎসা সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।

৬) যেখানে কোন ডাক্তার নাই বা চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা নাই এমন জরুরী অবস্থায় আপনি হামদর্দ কোম্পানির সিরাপ এন্টিফেভ ( অমৃতারিস্ট ) ৩ চা চামচ করে ২ বার আধা গ্লাস পানিসহ খেতে পারেন অথবা হামদর্দ কোম্পানির সিরাপ ফেভনিল ( খাকসী ) চার চা চামচ করে রোজ তিনবার খাবেন।

সাথে , এন্ড্রোগ্রাফিস পেনিকুলেটা গ্রুপের ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খেতে পারেন , এই হার্বস ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই গ্রুপের ওষুধ ইবনে সিনা কোম্পানি Flucare , একমি কোম্পানি Hepafil , স্কয়ার কোম্পানি Livolite নামে বাজারজাত করেছে। এই ওষুধের খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে ১ টি করে ট্যাবলেট অথবা ক্যাপসুল তিনবার খাবার পর খেতে হবে ৭ দিনের বেশি না।

আবারো বলি এগুলো অবশ্যই এমন জরুরি অবস্থার চিকিৎসা যেখানে কোন ডাক্তার নেই। সাথে প্রচুর পানি বিশ্রাম তরল খাবার ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে।কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথার ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।

( বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লেখা চিকিৎসার অথবা চিকিৎসকের বিকল্প নয় )
.
ধন্যবাদ সবাইকে যারা কষ্ট করে এই লেখাটি পড়লেন, আল্লাহ আমাদের সবাইকে ডেঙ্গু জ্বর থেকে সুস্থ রাখুক ভাল রাখুক।

আরো পড়ুন:

 

Related Posts

No Responses

Add Comment

You cannot copy content of this page