ইসলামে মাজহাব চারটি কেন ?

ইসলামে মাজহাব চারটি কেন ?
আব্দুল কারীম আল-মাদানী
শারীয়াহ বিভাগ, ফিকাহ।
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।

প্রথমে কিছু কমন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা যাক! –

ইসলামি শরিয়তের দলিল কোরআন হাদিস ইজমা কিয়াস, অন্য কিছু নয়

চার মাজহাবের বই-পুস্তক (কুরআন হাদিসের দলীল দ্বারা রচিত) এমন নয় ইমামদের মনে যা এসেছে তাই লিখে ফেলেছেন।

ইসলামে মাজহাব চারটি কেন ?

ইতিহাসে আরোও তো মাজহাব ছিলো, তবে এই চার মাজহাবকে মানতেই হবে কেন ? চার মাজহাব এসে ইসলামকে চারভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। মাজহাবের মতানৈক্যর কারণে ইসলামের পতন হয়েছে। বাগদাদের পতন হয়েছে। এরকম কিছু প্রশ্ন আপনারা কি শুনতে পান ?

জ্বী, হ্যাঁ ! হয়তো আপনাদের অনেকেই ইতোমধ্যে এই প্রশ্নের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আছেন । অনেকেই হয়তো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সদুত্তরের অভাবে নিরুত্তর হয়ে আছেন ৷ তাই ভাবলাম, বিষয়টি নিয়ে কিছু লেখার দরকার৷ আল্লাহ তাওফীক দাতা !

বিষয়টি পরিস্কার করার জন্য লেখাটিকে দু’টি প্রশ্নে ভাগ করে নিচ্ছি। এতে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে ইনশাআল্লাহ !

১. মাজহাব কেন আসলো?
২. অনেক মাজহাব থেকে ইসলামে মাজহাব চারটি কেন হলো ?

 মাজহাব কেন আসলো ?

উত্তর – আমরা জানি যে, আহকামুশ শারীয়া বা শারীয়াতের বিধি-নিষেধ দু’প্রকার –

১. স্পষ্ট আহকাম
২.অস্পষ্ট আহকাম

শারীয়াতের যে সকল বিষয়াদী একদম স্পষ্ট রয়েছে, সে’সব বিষয়ে মাজহাবের কোন বিতর্ক নাই। অপর কথায় বলা যায় যে, ইসলামের মৌলিক বিষয়ে মাজহাবের কোন বিতর্ক নাই।

যেমন ধরুনঃ নামাজের হুকুম ফরজ , রোজার হুকুম ফরজ ইত্যাদি ।

শারীয়তের এমন কিছু বিষয় আছে, যা কোর’আন-হাদিসে অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য এসেছে। অপর কথায় বলা যায় যে, শারীয়তের ফুরুয়ী মাসালায় অস্পষ্টতা থাকার কারণে মতানৈক্য হয়েছে।

যেসব ফুরুয়ী বা শারীয়তের শাখাগত বিষয়ে অস্পষ্টতা এসেছে, সেসব বিষয়ে ইসলামের যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামগণ নিজস্ব যোগ্যতার বলে গবেষণা করেছেন। আর সেই গবেষণার ফলাফল একাধিক এসেছে বিধায় মাজহাব বা একাধীক মতবাদ এসেছে৷

যেমন ধরুনঃ আল্লাহ তা’লা পবিত্র কোর’আনে সূরায়ে বাক্বারার ২২৯ নং আয়াতে বলেন –

والمطلقات يتربصن بانفسهن ثلاثة قروء

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’লা তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের ইদ্দতের বর্ণনা দিয়েছেন। তবে আয়াতে “কুরু ” শব্দটা স্পষ্ট । এর কুরু শব্দ দ্বারা হায়েজ উদ্দেশ্য নাকি তুহুর উদ্দেশ্য, তা ক্লিয়ার না।

যার কারণে, মাজহাবের ইমামগণ গবেষণা করে একটা ফলাফল বের করেছেন। আর এই ফলাফলের ভিন্নতার নামই হলো মাজহাব।

মোদ্দাকথাঃ সংক্ষেপে আমরা জানতে পারলাম দু’টা বিষয় –

১. শারীয়াতের মৌলিক কোন বিষয়ে মাজহাবের ইমামদের মতানৈক্য নাই। বরং ফুরুয়ী তথা শাখাগত বিষয়ে মতবেদ রয়েছে ।

২. শারীয়তের স্পষ্ট কোন বিষয় বর্ণনার জন্য মাজহাব তৈরী হয় নাই। বরং, অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য বিষয় বর্ণনার জন্য মাজহাব বা মতানৈক্য এসেছে ৷

 

দ্বিতীয় প্রশ্ন –

ইসলামে মাজহাব চারটি কেন হলো ?

উত্তর – এ কথা চির সত্য যে, সাহাবা ও কিবার তাবেয়ী পরবর্তী যুগ থেকে অনেক মুজতাহিদ ইমামের গবেষণা থেকে মাজহাব আবিস্কৃত হয়েছিলো বা তারা ইমাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।

এমন শতাধীক মুজতাহিদ ইমামের নাম পাওয়া যায়, যারা নিজস্ব যোগ্যতায় ইজতেহাদ দ্বারা শারীয়াতের স্পষ্ট ও দুর্বোধ্য বিষয়ের সমাধান দিয়ে গেছেন।

তবে তারা পরবর্তীতে তাদের মতবাদকে মাজহাব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

এর অনেক কারণ আছে। তবে মৌলিক কয়েকটি কারণ আমি এখানে উল্লেখ করছি –

১. কোন মাজহাব তখনই স্বীকৃতি পাওয়ার কথা, যখন কোন মাজহাবে ইসলামের শুরু-শেষ সকল সম্ভাবনাময় সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু, চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাবে শারীয়াতের পূর্ণাঙ্গ  বিষয়াদী ফুটে ওঠে নাই।

যার ফলে, ইতিহাসে কেবল প্রসিদ্ধ চার মাজহাবই স্বীকৃতি পায়। অন্য কোন মাজহাব স্বীকৃতি পায় নাই।

২. মাজহাব এর জন্য অতীব প্রয়োজনীয় হলো উসূল বা মূলনীতি থাকা। কারণ, ভবিষ্যতে কোন নতুন বিষয়ে সমাধান দিতে হলে উসূল বা মূলনীতি এর প্রয়োজন হয় ।

আমরা দেখতে পাই, চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন ইমামের বা মাজহাবের কোন মূলনীতি নাই। যার কারণে চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাব স্বীকৃতি পায় নাই।

৩. মাজহাব আমাদের পর্যন্ত কোন তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পৌঁছে নাই। বরং, মাজহাবের ইমামগণ ইজতেহাদ করেছেন। তাদের গবেষণা প্রতিটা যুগে মুসলিম মনীষাগণ সংরক্ষণ করেছেন।

হাদীস জালকরণের ভয়াবহ পরিণতি

লে আমাদের কাছে যথাসুন্দরে এই চার মাজহাব পৌঁছেছে৷ চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাব সেভাবে আমাদের কাছে পৌঁছে নাই। ফলে চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাব স্বীকৃতি পায় নাই।

৪. ইসলামের স্বীকৃত চার মাজহাবের ইমামগণের হাজার হাজার ছাত্র ছিলেন। যারা মাজহাবকে প্রচার-প্রসারে কাজ করেছিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবেও মাজহাব স্বীকৃতি পেয়েছিল।

আব্বাসী যুগে হানাফী মাজহাব অনুযায়ী পূর্ব-পশ্চিম সারা বিশ্বে বিচার কার্য পরিচালিত হতো। অন্যান্য মাজহাব দ্বারা সেভাবে হয়নি, বিধায় চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাব স্বীকৃতি পায় নাই।

৫. স্বীকৃত চার মাজহাবের বই-পুস্তক (কুরআন হাদিসের দলীল দ্বারা রচিত)আমাদের কাছে যেভাবে স্বতন্ত্র এসেছে, সেভাবে অন্যান্য কোন মাজহাবের বইপত্র আসে নাই।

 

বিধায় চার মাজহাব ছাড়া অন্যান্য কোন মাজহাব এককভাবে অনুসরণীয় হিসেবে স্বীকৃতি পায় নাই।

এটা আল্লাহ তা’লারই একটা ইচ্ছা

মোদ্দাকথা, বলতে গেলে আরো অনেক কথা আছে। তবে সবচেয়ে গুরুতর বাস্তব কথা হলো, এটা আল্লাহ তা’লারই একটা ইচ্ছা যা নিয়ামত হিসেবে উম্মাহের উপর ন্যস্ত রয়েছে।

নতুবা, তেরো শত বছর আগের ইলম এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে অক্ষুণ্ণ থাকা মোটেও স্বাভাবিক বিষয় না।

আল্লাহ তা’লার অনুগ্রহ না থাকলে এসব মাজহাব আরো অনেক আগেই দুনিয়া থেকে মুছে যেতো।

কিন্তু, আল্লাহ তালা যুগে যুগে এমন মানুষ তৈরী করেছেন,

যারা মাজহাবের ইলমকে বুকে ধারণ করেছিলেন বিধায় এই এলম আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে।

যা চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাবের বা মতবাদের ক্ষেত্রে ঘটে নাই।

আরো পড়ুন:

Related Posts

Add Comment

You cannot copy content of this page