Page Content Highlights
জ্ঞানার্জনে দিগ দিগন্তে গমনের ফযীলত :
হাদীস অন্বেষণে এক তাবেঈর (রাহ.) মদীনা থেকে দামেস্ক গমন । ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন ইমাম কায়স ইবনে কাসীর রাহ.।
তিনি বলেন, মদীনা থেকে একজন লোক আবু দারদা রা. এর নিকট আগমন করল। তখন তিনি দামেস্কে ছিলেন। তাঁকে দেখে আবু দারদা বললেন, অতিথি মহোদয়! কী উদ্দেশ্যে আপনার আগমন?
আগত লোকটি বললেন, আমি শুনেছি, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। সেই হাদীসে নববী অর্জনে আপনার দরবারে হাযির হয়েছি। আবু দারদা বললেন, তুমি অন্য কোনো প্রয়োজনে আসো নি?
উত্তরে বলল, না তো! ব্যবসার নিয়তে আসো নি? না তো! আমি তো কেবল হাদীস অন্বেষণেই এসেছি।
এবার আবু দারদা রা. বললেন, আমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ইলমের খোঁজে পথ পাড়ি দেয়, আল্লাহ তাআলা এর বদৌলতে তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন।
ফেরেস্তাগণ তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আপন ডানা সঙ্কুচিত/ বিছিয়ে দেন। সমুদ্রের মাছসহ নভোমণ্ডল ও ভুমণ্ডলের সকল মাখলুকাত তাঁর জন্য মাগফিরাত কামনা করতে থাকে। আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব আবেদের উপর তেমন, যেমন চাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব তারকারাজির উপর। নিশ্চিত আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ দীনার-দিরহাম উত্তরাধিকার রেখে যান নি। তারা ইলম রেখে গেছেন। সুতরাং যে ইলম হাসিল করবে, সে মহা দৌলত লাভ করবে।
(সুনানে তিরমিযী [2682])
এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে ,জ্ঞানার্জনে দিগ দিগন্তে গমনের ফযীলত অনেক বেশী ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইলম অর্জনের তাউফিক দান করুন আমিন।
হাদীসের আলো
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
سَلُوا اللَّهَ عِلْمًا نَافِعًا وَتَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ.
তোমরা আল্লাহর নিকট উপকারী ইলম-জ্ঞান চাও। অনুপকারী ইলম হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো।
(হাসান) সুনানে ইবনে মাজাহ (3843), সহীহ ইবনে হিব্বান (82)
- গুনাহের কারণে ব্যথিত হওয়া ও নেকী করলে আনন্দিত হওয়া মুমিনের নিদর্শন:
سأل رجل النبي صلى الله عليه وسلم فقال: ما الإثم؟ فقال: ” إذا حك في نفسك شيء فدعه “. قال: فما الإيمان؟ قال: ” إذا ساءتك سيئتك، وسرتك حسنتك فأنت مؤمن “
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি গুনাহের কাজ তোমাকে ব্যথিত করে এবং নেক কাজ তোমাকে আনন্দিত করে তবে তুমি (পরিপূর্ণ) মুমিন। [হাদীস সহীহ] (মুসনাদে আহমাদ (২২১৫৯)
- প্রকৃত বুদ্ধিমান কে?
الكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ المَوْتِ، وَالعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا وَتَمَنَّى عَلَى اللَّهِ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধিমান হলো সে, যে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং পরকালের জন্য নেক আমল করে।
আর ব্যর্থ সে যে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আর আল্লাহ তা‘আলার নিকট অলীক আশা রাখে।
(হাদীস হাসান) সুনানে তিরমীযী [২৪৫৯]
- সৎ পথ প্রদর্শনের ফযীলত:
قال النبي صلى الله عليه وسلم لعلي رضي الله عنه :فَوَاللَّهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا، خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা. কে সম্বোধন করে বললেন, আল্লাহর কসম, তোমার দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়াত প্রাপ্ত হয়, তা হবে তোমার জন্য লাল রঙ্গের উট প্রাপ্তির চেয়েও অধিক উত্তম।
(সহীহ বুখারী (3701)
- পার্থিব উদ্দেশ্যে ইলম তলবকারী কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুবাস পাবে না!
নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ، لَا يَتَعَلَّمُهُ إِلَّا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম- জ্ঞানকে দুনিয়া হাসিলের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের খোশবু পাবে না!
(হাসান) [মুসনাদে আহমাদ {8457}, সুনানে আবু দাউদ {3664}) - ইলম উঠে যাওয়ার কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন
“সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, কিয়ামাতের নিদর্শনসমূহের অন্যতম নিদর্শন
হলো “ইলম উঠে যাওয়া, অজ্ঞতা সাব্যস্ত হওয়া, মদ্যপান
ও যিনার প্রসার ঘটা ৷”
সহীহ মুসলিম ৬৬৭৮
- আমি কি শুকরগুযার বান্দা হবো না??
সাহাবী হযরত মুগীরা বিন শুবা রা. বর্ণনা করেন,
إِنْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَقُومُ لِيُصَلِّيَ حَتَّى تَرِمُ قَدَمَاهُ – أَوْ سَاقَاهُ – فَيُقَالُ لَهُ فَيَقُولُ: «أَفَلاَ أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত অধিক পরিমাণ ও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর নামায পড়তেন যে, তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এত অধিক নামায পড়েন কেন…? উত্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি শুকরগুযার বান্দা হবো না!
সহীহ বুখারী (1130) - উসমান বিন আফফান (রাঃ) যখন কোনো কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন এমনভাবে কাঁদতেন যে, নিজের দাড়ি মোবারক ভিজে যেত। তাই একবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি জান্নাত ও জাহান্নাম স্মরণ করে ও এত কাঁদেন না, যতটুকু কাঁদেন কবর দেখে! এর কারণ কী? তিনি বললেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কবর হচ্ছে আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। এখানে যদি কেউ রক্ষা পেয়ে যায়, তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
আর এখানে কেউ যদি রক্ষা না পায় তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য খুব কঠিন হবে।
তিনি আরও বললেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, মেরাজের রজনীতে আমি যত ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি তার মধ্যে কবরের আজাবই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ।
হে আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবরের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি দিও….. আমিন
(তিরমিজি শরিফ -২৩০৮)