Site icon modernitbd.com

ঈমামে আজম আবু হানীফা রহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

ঈমামে আজম আবু হানীফা রহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

ঈমামে আজম আবু হানীফা রহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ হানাফী মাযহবের প্রবক্তা-আয়িম্মায়ে আরবায়ের অন্যতম,
ঈমামে আজম আবু হানীফা রহঃ

Page Content Highlights

ঈমামে আজম আবু হানীফা রহঃ এর নাম ও উপাধি

নাম – নােমান, ডাকনাম – আবু হানীফা, উপাধি – ইমাম আ’যম। পিতার নাম – সাবিত। দাদার নাম জ্যোত্বী।

পরদাদার নাম – মুববান। ইমাম আবু হানীফার দাদা জ্যোধী ইসলাম গ্রহন করিবার পরে তাহার নাম রাখা হইয়াছিল নােমান।

হজরত সাবিত তাহার পিতার নাম অনুযায়ী পুত্র আবু হানীফার নাম রাখিয়া ছিলেন নাে’মান।

যেহেতু ‘হানীফ’ শব্দের অর্থ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। কোরয়ান পাকের মধ্যে দ্বীন ইসলামকে ঘীনে হানীফ বলা হইয়াছে।

যেহেতু ইমাম সাহেব খােদা প্রদত্ত প্রতিভায় জগতবাসীর সামনে হককে বাতিল থেকে-সত্যকে মিথ্যা থেকে পার্থক্য করিয়া দেখাইয়াছেন, এইজন্য তাঁহাকে আবু হানীফা বলা হইয়া থাকে। অন্যথায় তাহার সন্তানাদিদের মধ্যে কাহার নাম ‘ হানীফাহ’ ছিলাে না।

সব চাইতে সঠিক সূত্রানুযায়ী ইমাম আবু হানীফা আশি (৮০) হিজরীতে জন্ম গ্রহন করিয়াছিলেন এবং তাহার ইন্তেকাল হইয়াছে দেড়শত হিজরীতে। তাঁহার ইন্তেকালের সন সম্পর্কে কাহারো কোন দ্বিমত নাই।

ইসলাম জগতের চতুর্থ খলীফা হজরত আলী মুর্তাজা রাণী আল্লাহু আনহুৱ সহিত ইমাম আবু হানীফার খান্দানী সম্পর্ক ছিলাে। তঁাহার দাদা জ্যোত্বী – নােমান একবার তাহাদের ‘ন’রাে’ বা পারস্যবাসীর ঈদের দিন ফালুদা নামক এক প্রকার মিষ্টান্ন লইয়া হজরত আলীর দরবারে উপটৌকন নিয়া গিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন – ‘

আজ আমাদের ঈদের দিন। ফালুদা দেখিয়া ও ‘ন’রােয’ শুনিয়া শেরে খােদা হজরত আলী মৃদু হাসিয়া বলিয়াছিলেন – ন’রােযু না কুল্লা-ইয়াওমিন অর্থাৎ প্রতিদিন আমাদের নরােষ হইয়া থাকে।

এই ঘটনা থেকে প্রমান হইয়া থাকে যে, ইমাম আযম আবু হানীকার পূর্বপুরুষগন হজরত আলী রাণী আল্লাহু আনহুর সহিত ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখিয়া চলিতেন। ইমাম আবু হানীফার পিতা হজরত সাবিতকে সঙ্গে লইয়া তাহার দাদা জ্যোত্বী হজরত আলী রাণী আনার দরবারে হাযির হইয়া আবেদন করিয়াছিলেন – আমার এই পুত্র সাবিতের জন্য দুয়া করিয়া দিন।

তখন তিনি তাহার জন্য দুয়া করিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন – আল্লাহ, এই সাবিতকে ও ইহার বংশধরকে বর্কাত দিয়া থাকেন। ইমাম আবু হানীফার পৌত্র ইসমাঈল ইবনে হাম্মাদ ইবনে আবু হানীফা বলিয়াছেন – আমার দাদা (আবু হানীফা) আশি হিজরীতে জন্ম গ্রহন করিয়াছেন।

সাবিত তাহার পিতার সহিত হজরত আলীর দরবারে গিয়াছিলেন, যখন তিনি শিশু ছিলেন। হজরত আলী তাহার জন্য ও তাহার বংশধরদের জন্য দুয়া করিয়াছিলেন। ইসমাঈল ইবনে হাম্মাদ বলিতেন, আমরা ধারণা রাখিয়া থাকি যে, এই দুয়ার বরকতে আমার দাদাজান ইমাম আযম হইয়া গিয়াছেন এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত তাহার ফিকাহ চালু হইয়া গিয়াছে।

প্রকাশ থাকে যে, যখন হজরত সাবিত হজরত আলীর দরবারে গিয়াছিলেন তখন তাহার বয়স ছিল দুই তিন বৎসর। আরাে প্রকাশ থাকে যে, হজরত ইসমাঈলের এই বিবরণটি খতীবে বাগদাদী তাহার তারিখের মধ্যে লিখিয়াছেন।

আরাে প্রকাশ থাকে যে, ইমাম আবু হানীফা ও তাঁহার পিতা সাবিত এবং তাহার দাদা জ্যোত্বী – নাে’মান; সবাই তাবেয়ী ছিলেন। এই বৈশিষ্ট্য দ্বিতীয় কোন মাযহাবী ইমামের মধ্যে পাওয়া যায় না। আল হামদু লিল্লাহ! তায়েবী’ সেই সমস্ত ঈমানদারগনকে বলা হইয়া থাকে যাহারা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের সাহাবাগনের মধ্যে কমপক্ষে একজনের সহিত সাক্ষাত করিবার সৌভাগ্য লাভ করিয়াছেন।

ঈমামে আজম আবু হানীফা রহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

ইমাম আবু হানিফা ইরাকের কুফায় ৫ সেপ্টেম্বর ৬৯৯ ইংরেজী মোতাবেক ৮০ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন, আর অন্য বর্ননায় ৬১ হিজরীতে জন্মের বলা হইয়াছে যেমন :

(১) তারিখে বাগদাদ ১৩/৩৩১, (২) মানাকিবে ইমামে আজম (মুযাফিক) ১/৫ (৩) মানাকিবে ইমামে আজম (কারদয়ী) ১/৫ (৪) ওয়াফিয়াতুল আয়ান ওয়া আনবাউজ জামান ৫/৪১৩ (৫) আল-জাওয়াহিরুল মুযিয়াহ ফি তাবকাতিল হানাফীয়াহ ১/২৭ (৬) আল খায়রাতুল হিসান ৬১ পৃষ্ঠা (৭) উমদাতুল কারী শারহে বুখারী (আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি) ৯/৯৫ ইত্যদি। এবং ১৪ জুন ৭৬৭ ইংরেজী ১৫০ হিজরী ইন্তেকাল করেন।

ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ছিলেন একজন তাবেঈ।

সাহাবী আনাস ইবনে মালিক (রা) এর সাথে সাক্ষাত হওয়ার কারনে তিনি একজন তাবেঈ।

যেসব সাহাবী (রাঃ) এঁর সাক্ষাৎ তিনি লাভ করেন তাদের মধ্যে ছিলেনঃ

ইমাম আবু হানীফা রহ. অন্যুন আটজন সাহাবীর সাক্ষাত লাভ করেছেন।
এঁরা হচ্ছেন-

তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ হলোঃ
  1.  মুসনাদে আবু হানিফা
  2. আল ফিকহুল আকবর
  3. ওয়াসিয়াতু আবু হানিফা
  4. কিতাবুর আছার লি আবি হানিফা।
.
তিনি হিজরী ১৫০ তে তৎকালীন খলিফা মনসুর কর্তৃক প্রয়োগকৃত বিষক্রিয়ার ফলে কারাগারে শহীদ হন।
তাঁর প্রথম জানাজায় লোকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৫০ হাজারেরও উপরে। ৫/৬ দফায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ৷
তার জানাজায় সর্বশেষ ইমামতি করেন তার পুত্র হাম্মাদ (রহঃ)। তাকে খাজরান নামক স্থানে তার শিষ্য ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) ও ইমাম মুহাম্মদের (রহঃ) এর মাঝখানে সমাহিত করা হয়। দাফনের পরও বিশ দিন পর্যন্ত তাঁর কবরের পাশে জানাজার নামাজ আদায় করা হয়।

 

হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ|ঈমামে আজম আবু হানীফা রহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

সে সময়কার রাজনৈতিক পরিস্হিতি ইমাম আবু হানীফা রহ. যখন জন্ম গ্রহণ করেন তখন আলমে ইসলামের খেলাফতের মনসদে অধিষ্ঠিত ছিলেন আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান।

ইরাকের শাসন কর্তৃত্ব ছিল হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের হাতে। সাহাবী এবং যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানীগুনিগণের শহর কুফা ছিল তার রাজধানী।

হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ

হাজ্জাজকে ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে জালেম প্রশাসকরূপে আখ্যায়িত করা হয়।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবীসহ অগণিত সংখ্যক জ্ঞানী গুনীকে তার জুলুম অত্যাচরের কবলে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল।

খলীফা ওমর ইবনে আবদুল আযীয বলতেন, পূর্ববর্তী উম্মতগণের সকল জালেমকে এক পাল্লায় এবং আমাদের হাজ্জাজকে যদি আর এক পাল্লায় তোলা হয় তবে নিঃসন্দেহে হাজ্জাজের জুলুমের পাল্লা অনেক ভারি হবে।

ইবরাহীম নখয়ীর রহ. ন্যায় সাধক ব্যক্তি হাজ্জাজের মৃত্যুসংবাদ শুনে সেজদায় পড়ে অশ্রুভারাক্রান্ত চোখে আল্লাহর শুকুর আদায় করেছিলেন।

জুলুম-অত্যাচরের বিভীষিকাময় পরিস্হিতিতে আলেম-সাধক এবং দীনদার শ্রেণীর লোকেরা অনেকটা নিষ্ক্রীয়তা এবং নির্জনবাস বেছে নিয়েছিলেন।

যারাই একটু সাহসের সাথে অগ্রসর হয়েছেন, তাদের কেউ এই জালেমের কবল থেকে নিষ্কৃতি পাননি।

খলীফা আবদুল মালেকের ইন্তেকাল হয় হিজরী ৮৬ সনে।

দুর্দন্তপ্রতাপ এই খলিফার শাসনামলে ইসলামী খেলাফতের সীমান্ত পূর্বে কাবুল-কান্দাহার এবং সিন্ধু-পান্জাব পর্যন্ত এবং পশ্চিমে স্পেন পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল।

কিন্তু এলমে-দীনের বড় বড় কেন্দ্রগুলি ছিল স্তব্ধ।

আলেমগণ নিজেদের নির্জন হুজরায় বরে দীনি এলেমের চর্চা নামেমাত্র বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সত্য, কিন্তু বৃহত্তর জনগণের মধ্যে এলেমের চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

হিজরী ৯৫ সনে হাজ্জাজ মৃত্যু মুখে পতিত হয়।

পরবর্তী বছর আব্দুল মালেকের পুত্র ওলীদেরও মৃত্যু হয়। ওলীদের মৃত্যুর পর সুলায়মান ইবনে আবদুল মালেক খেলাফতের দায়িত্ব লাভ করেন।

ইতিহাসবিদগণের বিবেচনায় সুলায়মান ছিলেন উমাইয়া বংশীয় খলীফাদণের মধ্যে অন্যতম সেরা সৎ শাসক।

ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ

হিজরী প্রথম শতাব্দির মুজাদ্দেদ রূপে পরিচিত ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. নিযুক্ত হন তার প্রধান উপদেষ্টারূপে।

মাত্র পৌনে তিন বৎসর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করার পর যখন সুলায়মান ইবনে আবদুল মালেক ইন্তেকাল হয়, তখন খলিফার অসিয়্যত অনুযায়ী ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. পরবর্তী খলিফা নির্বাচিত হন। (হিজরী ৯৯ সন)

ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. স্বয়ং একজন সাধক প্রকৃতির আলেম ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহ ও যত্নে সে যুগের বিশিষ্ট আলেমগণ হাদিস, তফসীর ও ফেকাহশাস্ত্রের চর্চায় ব্যাপকভাবে আত্মনিয়োগ করেন।

ইমাম বুখারী লিখেছেন, ওমর ইবনে আবদুল আজীজ রহ. আবু বকর ইবনে হাদম এর বরাবরে লিখিত এক পত্রে এ মর্মে আদেশ প্রদান করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস সুমূহ যত্নের সাথে সংগ্রহ ও তা লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্হা কর।

আমার আশঙ্কা হয় (বিরাজমান অবস্হায়) এলেম চর্চা এবং আলেমগণের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে না যায়! (সহীহ আল বুখারী)

আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী বহ. বলেন ওমর ইবনে আবদুল আজীজ উপরোক্ত মর্মের আদেশনামাটি সে যুগের সব বিশিষ্ট আলেমের নিকট প্রেরণ করেছিলেন।

যার ফলশ্রুতিতে হিজরী ১০০ সন থেকে হাদিস সংকলনের কাজ ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে যায়। তা না হলে আজ আমাদের নিকট হাদিসের যে বিরাট ভান্ডার মজুদ আছে, তা হয়ত থাকতো না। (ওমদাতুল-ক্বারী, ১ম খন্ড)

ঈমামে আজম আবু হানীফা রহঃ

ওলীদের যখন মৃত্যু হয় (হিজরী ৯৬) তখন আবু হানীফা রহ. ষোল বছরের তরুণ।

এ পর্যন্ত তাঁর লেখাপড়া পারিবারিক পরিবেশেই সীমিত ছিল। সে বছরই পিতার সাথে হজ্বে গমন করে মসজিদুল-হারামের দরছের হালকায় বসে আল্লাহর নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন সাহাবীর জবানী হাদিস শ্রবণ করার মাধ্যমে এলমে-হাদিসের সাথে তাঁর সরাসরি পরিচিতি ঘটে।

 

ঈমামে আজম আবু হানীফা রহঃ শিক্ষা জীবন

একদিন তিনি ইমাম শায়াবীর বাড়ীর নিকট থেকে বাজারে যাইতে ছিলেন।ইমাম শায়াবী তাহাকে একজন নওজোয়ান তালিবুল ইল্ম ধারণা করতঃ নিজের কাছে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছেন – কোথায় যাইতেছাে? উত্তরে তিনি একজন সওদাগরের নাম বলিয়া দিয়াছেন।ইহা শুনিয়া ইমাম শায়াবী বলিয়াছেন আমার উদ্দেশ্য ইহা জানা নয়, বরং জানিতে চাহিতেছি যে, তুমি কাহার নিকটে পড়াশােনা করিয়া থাকো?

তিনি অত্যন্ত আফসােসের সহিত উত্তর দিয়াছেন-কাহারাে কাছে নয়। ইমাম শায়াবী বলিয়াছেন – আমি তােমার মধ্যে এক অসাধারণ প্রতিভা দেখিতে পাইতেছি। তুমি উলামাদের কাছে বসা আরম্ভ করিয়া দাও। এই উপদেশ তাহার দিলের দুনিয়াকে পরিবর্তন করিয়া দিয়াছে।

তিনি আর কাল বিলম্ব না করিয়া ইল্ম হাসেল করিবার দিকে আকৃষ্ট হইয়া পড়িয়াছিলেন। প্রকাশ থাকে যে,এই ইমাম শায়াবী ছিলেন একমহা সৌভাগ্যবান ব্যক্তি।কারণ, তিনি পাঁচশত সাহাবায় কিরামের সহিত সাক্ষাতের সৌভাগ্যলাভ করিয়াছিলেন। কেবল তাই নয়, আরাে প্রকাশ থাকে যে, ইমাম শায়াবী ছিলেন কূফার সুবিখ্যাত ইমাম। ইনি ইমাম আবু হানীফার প্রথম সারির শায়েখ ছিলেন।

ইমাম আবু হানীফার হজরত হাম্মাদের শাগরেদী

ইমাম আবু হানীফার যুগে বহু প্রকারের ইল্মের চর্চা ছিলাে। অনুরূপ অনেক বাতিল ফিরকা মাথাচাড়া দিয়াছিলাে। এইজন্য তিনি সর্ব প্রথম ঈমানকে হিফাজত করিবার উদ্দেশ্যে ইল্মে কালাম বা আকায়েদ বিদ্যার দিকে ধ্যান দিয়াছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইল্মে ফিকহের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া ছিলেন। এই যুগে কূফার বিখ্যাত ইমাম ছিলেন হজরত হাম্মাদ।
হজরত হাম্মাদ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের বিশেষ খাদেম হজরত আনাস রাদী আল্লাহু আনহুর নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করিয়া ছিলেন এবং বড় বড় তাবেঈনদের সহিত সাক্ষাত করতঃ তাহাদের নিকট থেকে হাদীস শ্রবন করিয়াছেন। এই যুগেকূফাতে হজরত হাম্মাদের মাদ্রাসা ছিলাে সবচাইতে বড়।
হজরত ইমাম আবু হানীফা হজরত হাম্মাদের প্রথম সারির শিষ্য ছিলেন।
তাহার অসাধারণ স্মৃতি শক্তি ও প্রতিভা দেখিয়া হজরত হাম্মাদ ইমাম সাহেবকে নিজের সামনে খুব কাছাকাছি বসাইয়া বলিয়াছিলেন আবু হানীফা সবার সামনে বসিবে।
ইমাম সাহেব হজরত হাম্মাদের দরসে দুই বৎসর বসিয়া ছিলেন। একবার হাম্মাদ বিশেষ প্রয়ােজনে বাসরায় গিয়াছিলেন, দুই মাস পরে ফিরিয়া ছিলেন।
এই দুইমাস ইমাম আবু হানীফা হাম্মাদের স্থানে বসিয়া ইল্মে ফিকহার দন্স দিয়া ছিলেন।
একশত কুড়ি হিজরীতে হজরত হাম্মাদের ইন্তেকালের পর ইমাম সাহেব আরাে অনেক বড় বড় ফকীহদের সঙ্গলাভে ইল্মে ফিকাহার শিক্ষা লাভ করিয়া ছিলেন কিন্তু হজরত হাম্মাদই ছিলেন তাহার প্রধান গুরু।
মুসনাদে ইমাম আযম

ইমাম আবু হানীফার রহঃ জীবনের রাজনৈতিক সংকট

প্রথম যৌবনের সীমিত কিছুদিন ছাড়া ইমাম আবু হানীফার জীবনের শেষ মুহূর্তটি পর্যন্তটি ছিল ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটে কন্টকিত। তাঁর কর্মজীবনের শুরুতেই উমাইয়া শাসনের পতন এবং আব্বাসীয়দের খেলাফতের উত্থান ঘটে। আব্বাসীয়দের দাবী ছিল খোলাফায়ে-রাশেদীনের শাসন ব্যবস্হা পূনঃপ্রতিষ্ঠা এবং শাসন ক্ষমতায় আহলে-বাইতের প্রাধান্য স্হাপন। যে কারণে সমসাময়িক বিশিষ্ট আলেম ওলামাগণের পাশাপাশি ইমাম আবু হানীফাও রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটানোর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শরীক হয়েছিলেন।

সেই বিস্ফোরণমূথী রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যেই ইমাম আবু হনীফা কুরআন-সুন্নাহ এবং সাহাবীগণের জীবনপদ্ধতি মন্হন করে এলমে-ফেকাহ বা বিধান শাস্ত্র রচনা করে গেছেন। সর্বকালের মুসলমানদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বিজ্ঞান সম্মত বিধিবিধান সম্বলিত এগরো লক্ষাধীক মাসআলা সংকলিত করে গেছেন তিনি।

তাঁর সংকলিত মৌলিক মাসআলা-মাসায়েলের সুত্রগুলির মধ্যে এমন একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার সমর্থনে কুরআন, হাদিস বা সাহাবীগণের আছার এর সমর্থন নাই। এর দ্বারাই অনুমিত হয় যে, তাঁর জ্ঞানের পরিধি কতটুকু বিস্তৃত ছিল।ইমাম আবু হানীফার পৈত্রিক পেশা ছিল কাপড়ের ব্যবসা। ইরান থেকে শুরু করে ইরাক, সিরিয়া ও হেজায পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলব্যপী বিপুল পরিমণ মুল্যবান রেশমী কাপড়ের আমদানী ও রফতানী হতো। পৈত্রিক এই ব্যবসার সুবাদেই তিনি প্রচুর বিত্তের মালিক ছিলেন।

বিশিষ্ট ওলামাগণের মধ্যে সম্ভবত তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি রাস্ট্রীয় প্রষ্ঠপোষকতা বা বিত্তবানদের হাদীয়-তোহফা প্রাপ্তির পরোয়া না করে নিজ উপার্জনের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ, এলেমের সেবা এবং তাঁর নিকট সমবেত গরীব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার নির্বাহ করার ব্যবস্হা করতেন। তাঁর অন্যতম বিশিষ্ট সাগরেদ ইমাম মুহম্মদকে তিনি বাল্যকাল থেকেই লালন-পালন করে প্রতিষ্ঠার চুড়ান্ত শিখরে পৌছে দিয়েছিলেন। তাঁর অর্থ সাহায্যে লালিত এবং জ্ঞান চর্চার বিভিন্ন শাখায় সুপ্রতিষ্ঠিত মনীষীবর্গের তালিকা অনেক দীর্ঘ।

কিশোর বয়স থেকেই ইমাম সাহেব পিতার ব্যবসার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীক কাজেই তাঁকে বিভিন্ন বাজার ওবাং বাণিজ্য কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হতো। ঘটনাচক্রে একদিন ইমাম শা’বীর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়ে যায়। প্রথম দর্শনেই ইমাম শা’বী আবু হনীফার নিষ্পাপ চেহারার মধ্যে প্রতিভার স্ফুরণ লক্ষ করেছিলেন।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বৎস! তুমি কি কর? এ পথে তোমাকে সব সময় যাতায়াত করতে দেখি! তুমি কোথায় যাওয়া-আসা কর

ইমাম সাহেব জবাব দিলেন, আমি ব্যবসা করি। ব্যবসার দায়িত্ব পালনার্থেই ব্যবাসায়ীদের দোকানে দোকানে আমাকে যাওয়া-আসা করতে হয়। ইমাম শা’বী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এটা তো তোমার লেখাপড়ার বয়স। কোন আলেমের শিক্ষায়তনেও কি তোমার যাতায়াত আছে?

আবু হানীফা রহ. সরলভাবেই জবাব দিলেন, সেরূপ সুযোগ আমার খুব কমই হয়।

কিছুক্ষন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ইমাম শা’বী আবু হানীফাকে জ্ঞানার্জনে মনোযোগী হওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুললেন। ইমাম সাহেব বলেন, ইমাম শা’বীর সেই আন্তরিকতাপূর্ণ উপদেশবাণী গুলো আমার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করল এবং এরপর থেকেই আমি বিপনীকেন্দ্রগুলোতে আসা-যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রেও যাতায়াত শুরু করলাম। (মুয়াফেক, আবু জোহরা)

এ সময় আবু হানীফার রহ. বয়স ছিল উনিশ বা বিশ বছর। তিনি দীর্ঘ আঠারো বছর কাল ইমাম হাম্মাদের একান্ত সান্নিধ্যে জ্ঞানার্জনে নিমগ্ন থাকেন। ইমাম হাম্মাদের যখন ইন্তেকাল হয়, তখন আবু হানীফার বয়স ছিল চল্লিশ বছর। এ সময় তিনি উস্তাদের স্হলাভিষিক্ত হয়ে তাঁর শিক্ষাকেন্দ্রের পূর্ণদায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ফাতাওয়ার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার রঃ অনুসৃত নীতিঃ

যে কোন সমস্যার সমাধান অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার রঃ অনুসৃত নীতি ছিল, প্রথমে কুরআনের শরণাপন্ন হওয়া। কুরআনের পর হাদিস শরীফের আশ্রয় গ্রহণ করা।

হাদিসের পর সাহাবায়ে কেরাম গৃহীত নীতির উপর গুরুত্ব দেওয়া। উপরোক্ত তিনটি উৎসের মধ্যে সরাসরি সামাধান পাওয়া না গেলে তিনটি উৎসের আলোকে বিচার-বুদ্ধির (কেয়াসের) প্রয়োগ করা।

তাঁর সুস্পস্ট বক্তব্য ছিল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোন ধরনের হাদিস বা সাহাবীগণের অভিমতের সাথে যদি আমার কোন বক্তব্যকে সাংঘর্ষিক মনে হয়, তবে আমার বক্তব্য অবশ্য পরিত্যাজ্য হবে। হাদিস এবং আছারে সাহাবা দ্বারা যা প্রমাণিত সেটাই আমার মাযহাব। (তাফসীরে মাযহারী, খায়রাতুল-হেসান)

ইমাম ইবনে হাযম রঃ বলেন, আবু হানীফার রঃ সকল ছাত্রই এ ব্যাপারে একমত যে, নিতান্ত দূর্বল সনদযুক্ত একখানা হাদিসও তাঁর নিকট কেয়াসের তুলনায় অনেক বেশী মুল্যবান দলিলরূপে বিবেচিত হবে। (খায়রাতুল-হেসান) সম্ভবতঃ এ কারণেই পরবর্তী যুগে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যে সব কালজয়ী প্রতিভার জন্ম হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশ ইমাম আবু হানীফার রঃ মাযহাব অনুসরণ করেছেন।

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর সাথে একটি ব্যবসার অংশীদার ছিলেন বসরার জনৈক লোক।

একবার ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) তাকে ৭০টি মূল্যবান কাপড় পাঠিয়েছিলেন এবং সেগুলোর সাথে আলাদা করে লিখে দিয়েছিলেনঃ ❝এই কাপড়গুলোর একটিতে খুঁত আছে, সেটি হলো অমুক কাপড়টি। সুতরাং, আপনি যখন কাপড়গুলো বিক্রি করবেন তখন ভালো করে খেয়াল রাখবেন যেন কাপড়ের সমস্যাটি ক্রেতাকে উল্লেখ করে দেয়া হয়।❞
.
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর ব্যবসার অংশীদার সেই লোকটি কাপড়গুলো ৩০ হাজার দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করেন এবং যখন তিনি টাকা সহ আবু হানিফা (রহঃ) এর কাছে এলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ ❝আপনি কি কাপড়ের খুঁত গুলো বলে দিয়েছিলেন?❞ বসরার লোকটি উত্তর দিলেনঃ ❝আমি ভুলে গিয়েছিলাম।❞
আবু হানিফা (রহঃ) সেই কাপড় বিক্রির মুনাফা থেকে কিছুই গ্রহণ করেননি বরং তার সবটুকুই #সাদাকাহ করে দিয়েছিলেন।
.[জেমস অ্যান্ড জুয়েলস, পৃ ১২৪]

ইমাম আযম রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর জন্মের বহু বছর পূর্বে তাঁর আবির্ভাব সম্পর্কে হুযুর আলাইহিস সালামের সুসংবাদ পাওয়া যায় ।

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু ইরশাদ করেন, “আমরা হুযুর আলাইহি সালামের দরবারে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় সূরা জুমা অবতীর্ণ হলাে। যখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরার ‘(ওয়া আখিরীনা মিনহুম লাম্মা ইয়াল হাক্কু বিহিম অর্থাৎ তাঁদের অন্যান্য জনও যাঁরা এখনও তাঁদের সাথে মিলিত হয়নি), আয়াতখানা তিলাওয়াত করলেন, তখন উপস্থিত সাহাবীদের মধ্যে কেউ জিজ্ঞাসা করলাে হুযুর ! এ অন্যান্যরা কারা, যারা এখনও আমাদের সাথে মিলিত হয়নি ? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দানে নিরবতা পালন করলেন। যখন বারবার এ প্রশ্ন করা হয় তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সালমান ফারসী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর কাঁধে তাঁর পবিত্র হাত মােবারক রেখে ইরশাদ ফরমালেন-
ولو كان الإیا چند الثريا لناله رجال من هؤلاء
যদি ঈমান (দ্বীন) সুরাইরা নক্ষত্রের নিকটেও অবস্থিত হয় তবে এ সম্প্রদায়ের লােকেরা তা অবশ্যই হস্তগত করে নিবে।
মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসের সুসংবাদ ইমাম আ’যমের ব্যাপারে বলেছেন।
১. হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফেয়ী রাহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত : ৯১১ হি.) তাবয়ীস সহীফা’ কিতাবে (ইমাম আ’যমের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুসংবাদ) শিরােনামে অধ্যায় রচনা করেছেন। যেখানে তিনি ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী রাহমতুল্লাহি আলাইহির মর্যাদা বর্ণনা করার পর বলেছেন,
أقول : و قد بشر بالإمام أبي حنيفة ق الخيري الذي أخرجه أبو نعيم ق الحلية
-আমি বলি, এ হাদীসে ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। যাকে আয়ূ নাঈম হিলয়াতুল আউলিয়া কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
এ উক্তি বর্ণনা করার পর ইমাম সুয়ূতী এ পবিত্র হাদীসকে তিন সাহাবার বরাত দিয়ে পাঁচটি বিভিন্ন কিতাব থেকে ছয় ধরনের ভাষায় বর্ণনা করেছেন। যা এ হাদীসের বিশুদ্ধতার উপর দৃঢ় দলীল। পরিশেষে ইমাম সুয়ূতী নিজের মতামত এভাবে ব্যক্ত করেন,
فهذا أضل صحيح يعتمد عليه في البشارة و القضيلة نظر الدين الذين في الإمامين ويستغنى به عن الحب الموضوع
-ইমাম আযমের ব্যাপারে এ হাদীসের সুসংবাদ ও মর্যাদা বিশুদ্ধ ও নির্ভরযােগ্য। যেমন পূর্বের বর্ণনায় ইমাম মালেক ও শাফেয়ী সম্পর্কে সুসংবাদ ছিল। ইমাম আযমের ব্যাপারে এই বিশুদ্ধ হাদীস অন্যান্য জাল বর্ণনার প্রয়ােজনবোেধ করে না।
২. ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী শাফেয়ী (ওফাত : ৯৭৩ হি.) তাঁর কিতাব ‘আল খায়রাতুল হিসানে’ ); (ইমাম
আবু হানীফার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুসংবাদ) শিরােনামে অধ্যায় রচনা করেছেন। ইমাম হায়তামী অধ্যায়ের শুরুতে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতীর উপরিউক্ত তাহকীক বর্ণনা করে লিখেন, ইমাম সুয়ূতীর কিছু ছাত্র বলেছেন এবং শায়খ সমর্থন দিয়েছেন,
أين الإمام أبا خية و المراد من هذا الخير ظاهر لاشك فيه لأنه لم يبلغ أحد أى في منه من أبناء فارسي في العلم مبله و لا تبلغ أضحابه و فيه منجرة ظاهرة إلى حيث أخبر با قع و لي اراد بممارسي البلد العزف بل چنت من العجم و هم القز و بأني أن جد الإمام أبي نيقة منهم على ما عليه الأكثرون..
নিশ্চয় এখানে কোন সন্দেহ নেই যে, এ হাদীস থেকে ইমাম আবূ হানীফা উদ্দেশ্য। কেননা তার যুগে কেউ পারস্যবাসী থেকে তার মত ঃ জ্ঞানী ও তাঁর ছাত্রদের মত জ্ঞানীর জন্ম হয়নি। এ হাদীস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু’জিযার বহিঃপ্রকাশ। কেননা তিনি ভবিষ্যতের সংবাদ দিয়েছেন। পারস্য’ থেকে কোন প্রসিদ্ধ শহর উদ্দেশ্য নয়; বরং তা দ্বারা অনারবের এক জাতি বুঝানাে হয়েছে। যারা পারস্যবাসী নামে খ্যাত। পরবর্তী বর্ণনা আসবে যে, আবু হানীফা রাহমতুল্লাহি আলাইহির দাদা পারস্য বংশীয় ছিলেন। অধিকাংশ আলিম এ ব্যাপারে একমত। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী ও ইমাম ইবনে হাজর হায়তামীর গবেষণা দ্বারা বুঝা যায়, পারস্যবাসী থেকে যে ভাগ্যবান ব্যক্তির ব্যাপারে রাসূল সুসংবাদ দিয়েছেন তিনি হলেন ইমাম আ’যম আবু হানীফা রাহমতুল্লাহি আলাইহি উপরিউক্ত আলােচনাকে যখন এ দৃষ্টিকোণে দেখা হবে যে, ইমাম আ’যম পারস্য বংশীয় হওয়া নানা দলীল দ্বারা প্রমাণিত বিষয়। পক্ষান্তরে ফিহের অন্যান্য প্রসিদ্ধ ঈমানগণ অনারব বা আরব হওয়ার যথেষ্ট প্রমাণ প্রসিদ্ধ জীবনী গ্রন্থে বিদ্যমান।
বই – ইমাম আবু হানীফা হাদিস শাস্ত্রের প্রধান ইমাম ও কাসীদা-ই নু’মান।

স্বপ্নের একটি বাস্তব ব্যাখ্যা আছে। যার নাম হল তাবীর।

স্বপ্নের তাবীর দুই ধরণের হয়। স্বপ্ন হয় বাহ্যিকভাবে অনেক খারাপ হয় কিন্তু এর তাবীর হয় ভাল। আবার কখনো স্বপ্ন হয় ভাল কিন্তু এর তাবীর হয় খারাপ।
প্রথম প্রকার স্বপ্নের উদাহরণ হল-
ক–
রাসূল সাঃ এর চাচি উম্মুল ফজল বিনতুল হারেস রাঃ এক স্বপ্ন দেখলেন। তারপর তিনি হুজুর সাঃ এর দরবারে এসে বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আজ রাতে আমি একটি খুবই খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। রাসূল সাঃ বললেন-তুমি কি দেখেছো? বল। তিনি বললেন-এটা খুবই শক্ত সন্দিহান স্বপ্ন। রাসূল সাঃ বললেন-বলনা শুনি কী দেখেছো? হযরত উম্মুল ফজল বললেন-আমি দেখেছি যে, আপনার শরীর থেকে এক খন্ড গোস্ত কেটে আমার কোলে এসে পড়েছে। তখন রাসূল সাঃ বললেন-তুমি অনেক সু্ন্দর স্বপ্ন দেখেছো। এ স্বপ্নে ব্যাখ্যা হল- আমার মেয়ের [ফাতিমা রাঃ] ঘরে যে বাচ্চা হবে সে তোমার কোলে খেলবে। তো হযরত হুসাইন রাঃ জন্ম নিলেন। আর তিনি আমার কোলে খেলেছেন, যেমনটি রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। {মেশকাতুল মাসাবিহ-২/৫৭২}
লক্ষ্য করুন-বাহ্যিকভাবে স্বপ্ন কতটা খারাপ ছিল, উম্মুল ফজল রাঃ যা বলতেই দ্বিধা করছিলেন। অথচ এর তাবীর কত সুন্দর।
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ব্যাপারে আরেকটি ঘটনা উদ্ধৃতি করাটা উপযোগী মনে করছি। যাতে করে বেদআতি ভন্ড হানাফীদের অন্ধ চোখ খুলে। যারা হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর মুরীদের উপর বিভিন্ন ধরণের অভিযোগের আঙ্গুল তুলে।
হযরত ইমাম আবু হানীফা রহঃ একদা স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি রাসূল সাঃ এর মাযারে পৌছলেন। সেখানে পৌছে তিনি রাসুল সাৰ এর কবর মুবারক ভেঙ্গে ফেললেন। [আল্লাহ হিফাযত করুন]।
এ মারাত্মক ও পেরেশানী উদ্দীপক স্বপ্নটি তিনি তার উস্তাদকে জানালেন। সে সময় ইমাম সাহেব রহঃ মক্তবে পড়ছিলেন। তখন তার উস্তাদ বললেন-যদি সত্যিই তুমি এ স্বপ্ন দেখে থাক, তাহলে এর ব্যাখ্যা হল-তুমি রাসুল সাঃ এর হাদীসের অনুসরণ করবে। আর শরীয়তে মুহাম্মদী সাঃ কে পরিপূর্ণ তথ্য-তালাশ করে গবেষণা করবে। ব্যাস! যেভাবে উস্তাদ বলেছিলেন সে ব্যাখ্যাটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল। {তাবীরুর রুউআ-১০৮, আকবর বুক ডিপো}
ভেবে দেখুন! কি রকম ভয়াবহ স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তাবীর তথা ব্যাখ্যা কত সুন্দর।
বলুনতো-বেরেলবী তথা বেদআতি গ্রুপেরা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর উপর কি ফাতওয়া দিবে?
একথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, আজ যদি এ ঘটনার মাঝে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নামের স্থলে দেওবন্দী কোন আলেমের নাম থাকতো, তাহলে বেদআতি গ্রুপটি এ ফাতওয়া দেয়া শুরু করে দিত যে, দেওবন্দীরা রাসূলের দুশমনী করে রাসূল সাঃ কবর মুবারকও ভেঙ্গে দিচ্ছে। নাউজুবিল্লাহ।
এ দু’টি স্বপ্ন বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হল-বাহ্যিকভাবে কোন স্বপ্ন ভয়ংকর হওয়া, এর তাবীরও ভয়াবহ হওয়া আবশ্যক নয়।

ইমাম আযম এর ব্যাপারে হযরত আলী মুর্তজার দোয়া

ইমাম আযমের দাদা যার নাম যােতী যার ইসলামী নাম ছিল নুমান। তিনি মুসলমান হওয়ার পর কুফায় আসলে সায়্যিদুনা মাওলা শেরেখােদা আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর অনুসারী ও ভক্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। তাঁর দাদা হযরত নুমান ইবনে মিরযুবান সম্পর্কে ইতিহাসের কিতাবে একটি ঘটনা রয়েছে। তাঁরা পারস্য বংশীয় হওয়ার কারণে নাওরােজ’ বা নববর্ষ পালন করত। যখন নববর্ষ আসল তখন তিনি পানীয়-দই (ফালুদা) নিয়ে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দরবারে হাযির হলেন।
১. ইমাম আযমের পৌত্র ইসমাঈল ইবনে হাম্মাদ বলেন,
والعاب الجزژا بؤابت هو الذي أدى بيع بن أبي طالب القالؤج في يوم الئيز فقال توتروژنا كل يوم و ييل كان ذلك في المهرجان فقال تر جونا گل يوم.
-আবূ সাবিত নুমান ইবনে মিরযুবান ঐ ব্যক্তি যিনি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দরবারে নববর্ষের সময় পানীয়-দই নিয়ে উপস্থিত হলেন তখন তিনি বললেন, আমাদের নববর্ষ প্রতিদিন হয় এবং এটাও বলা হয়েছিল যে, সে দিন ছিল তাদের উৎসবের দিন। তখন তিনি বললেন, আমাদের জন্য প্রত্যেক দিন উৎসবের দিন। এ থেকে বুঝা যায়, তাঁর বংশের মাঝে সর্বপ্রথম তাবেঈর মর্যাদা অর্জনকারী ছিলেন তাঁর দাদা।
ইমাম আযমের দাদা হযরত নুমান কূফায় অবস্থানকালে ইমাম আযম রাহমতুল্লাহি আলাইহির পিতা জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম আযম রাহমতুল্লাহি আলাইহির পিতার বয়স তখনাে কম। নু’মান তাকে কোলে নিয়ে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু দরবারে উপস্থিত হলেন এবং তার জন্য দোয়া করার জন্য বললেন। দু’য়েক বছরের বাচ্চাকে দোয়ার জন্য কোন বুযুর্গের সামনে পেশ করলে তখন তার জন্য ও তার সন্তানদের জন্যও দোয়া করা আমাদের সমাজে বিরল। এ কথা স্মর্তব্য যে, যাকে খতীব বাগদাদী, ইমাম সুমাইরী, ইমাম মিযী, ইমাম যাহাবী ও ইমাম সুয়ূতী প্রমুখ গুরুত্ব দিয়েছেন। হযরত নু’মান তাঁর দু’তিন বছরের বাচ্চার জন্য যখন আলীর দরবারে দোয়ার জন্য পেশ করেছেন তখন তিনি শুধু সাবিতের জন্য দোয়া করেননি; বরং সাথে তার সন্তানদের জন্যও দোয়া করেছেন।
ইমাম আযমের পৌত্র ইসমাইল ইবনে হাম্মাদ বলেন,
قب ثابت إلى علي بن أبي طالب و موضي فدعا له بالبركة فيه و ترهوتختم ترجو من الله أن يكون قد استجاب الله ذلك يتم بن أبي طالب فيينا.
-(আমার দাদা ইমাম আবু হানীফার পিতা) সাবিত শৈশবকালে যখন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দরবারে উপস্থিত হলেন, তখন তিনি সাবিত ও তার বংশধরের জন্য দোয়া করলেন। আমরা মহান আল্লাহর কাছে আশা রাখি যে, তিনি আমাদের ব্যাপারে তার উক্ত দোয়া কবুল করেছেন।

ইমাম আবু হানিফা (রঃ)’র একটি মজার ঘটনা বলি শুনুন।

জানেন তো ইমাম হানিফা কে? তাঁর সময়ের একজন অসাধারণ ফকিহ (ফিকাহ শাস্ত্র তথা ইসলামী আইন বিষয়ে পন্ডিত ব্যক্তি), লোকেরা তাঁর কাছে সবসময় আসতো ফাতওয়ার জন্য। একদা তাঁর মায়ের মনে একটি প্রশ্ন আসে। তাঁকে (ইমাম আবু হানিফাকে) জিজ্ঞাসা করলে, তিনি তাঁর মাকে সেই প্রশ্নের উত্তর দেন।

তাঁর মা ইমাম আবু হানিফার কথা উড়িয়ে দেন। আপনার মা আপনার সাথে এমনটা করতেই পারেন, তাই না? তো তাঁর মা সিদ্ধান্ত নিলেন আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করবেন। যাকে তিঁনি জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছিলেন, সেই ব্যক্তিটি একজন দাঈ’ ছিলেন, আলেম ছিলেন না।

তিনি মানুষকে দ্বীনের ব্যাপার স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন, তাক্কওয়ার ব্যাপারে বলতে পারেন, তবে তিনি ইসলামিক ফিকাহ বা শরিয়া’র ব্যাপারে জানেন না। তো, ইমাম আবু হানিফার মা সেই ব্যক্তিকে ওনার সেই প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করলেন। সেই ব্যক্তিটি ইমাম আবু হানিফার মাকে বললেন যে তিনি একটি গবেষণা করে তারপর উত্তর দেবেন। সেই দাঈ’ কার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ান? ইমাম আবু হানিফার! ইমাম কে জানান যে তাঁর মাতা ওনার কাছে এসেছিলেন একটি প্রশ্ন নিয়ে। ইমাম আবু হানিফা (সেই প্রশ্নের) উত্তর তো দিয়ে দিলেন, তবে মানা করে দিলেন বলতে যে ইমাম আবু হানিফা বলে দিয়েছেন।

মাঝে মাঝে আপনার পরিবারে এমন লোকজন থাকবে যারা আপনার কথা শুনতে অনিচ্ছুক। হতে পারে আপনি দ্বীনের অনেক গভীরে যেতে পেরেছেন। তবে (হয়তো) তারা দ্বীনের এতোটা নিকটবর্তী হননি। ব্যাপারটি আপনাকে উত্তেজিত করে। পরিবারের কেউ হিজাব পরিধান না করাতে আপনি রাগান্বিত হন। পরিবারের কিছু তরুণের সালাত আদায় না করা আপনাকে ক্রোধান্বিত করে তোলে। আপনি তাদের উপর চড়াও হন। না!

তাদের প্রতি রাগ পোষণ করবেন না, তাদের সা্থে শান্তিপূর্ণ ভাবে কথা বলুন। নম্রতার সাথে কথা বলুন। আপনার রুষ্টতা তাদেরকে দ্বীন থেকে আরও দূরে সরিয়ে নিবে, দ্বীনের কাছে আনবে না। আপনার অন্তর নরম করুন তাদের জন্য যারা এখনও দ্বীনের সেই স্তরে পৌঁছায়নি। আপনি নিজেই তো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতেন না।

এমন একটি সময় ছিল যখন আপনি আজকের মতো ছিলেন না। কেউ যদি রাগান্বিত কণ্ঠে আপনার সাথে কথা বলত, আপনি কি নামাজ পড়তে যেতেন, না কি আরও দূরে চলে যেতেন? সেই ব্যাপারে চিন্তা করুন না! চিন্তা করুন! আল্লাহ্‌ আপনার অন্তরকে কোমল করেছেন। এখন আপনি অপেক্ষা করুন যতক্ষণ না আল্লাহ্‌ তাদের অন্তরকেও নরম করে দিচ্ছেন। আর সেই সাথে আপনাকে সবার সাথে নম্র-বিনয়ী হতে হবে।

আমি লোকদের মনে করিয়ে দেই যে আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল, মুসা (আঃ) কে বলেছেন ফেরাউনের সাথে ভালো ব্যবহার করতে, সৎ ব্যবহার করতে ফেরাউনের সাথে! ফেরাউন, মুসা (আঃ) কে হত্যা করার চেষ্টা চালিয়েছিল যখন মুসা (আঃ) মাত্র একটি শিশু! ফেরাউন প্রতি বছর হাজার হাজার শিশুকে হত্যা করতো! সে নিজেকে খোদা দাবি করেছিল (না’উযুবিল্লাহ) ! ফেরাউনকে ঘৃণা করার কত কারণ রয়েছে! কিন্তু আল্লাহ্ বললেন, তার সাথে নম্রভাবে কথা বল।

যদি ফেরাউনের সাথে ভালো ব্যবহার করা হয়, তবে কিরূপ আচরণ করা উচিৎ আপনার পিতামাতার সাথে? আপনার স্ত্রীর সাথে? আপনার স্বামীর সাথে? আপনার সন্তানদের সাথে? আপনার নিজের ভাইবোনদের সাথে? আপনার মামাতো/চাচাতো/খালাতো/ফুপাতো ভাইবোনদের সাথে? এরা কিন্তু আমাদেরকে রাগান্বিত করেন। এরাই করেন। আমাদের পরিবার আমাদেরকে রাগান্বিত করে। আমি জানি। ভাইবোনেরা আপনাকে রাগিয়ে দেয়। এরাই কিন্তু আমাদের সবচাইতে নম্র আচরনের হকদার / দাবিদার / প্রাপ্য মানুষ। তাদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।

ইমাম আবু হানীফার শিক্ষা জীবন

একদিন তিনি ইমাম শায়াবীর বাড়ীর নিকট থেকে বাজারে যাইতে ছিলেন।ইমাম শায়াবী তাহাকে একজন নওজোয়ান তালিবুল ইল্ম ধারণা করতঃ নিজের কাছে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছেন – কোথায় যাইতেছাে?

উত্তরে তিনি একজন সওদাগরের নাম বলিয়া দিয়াছেন।ইহা শুনিয়া ইমাম শায়াবী বলিয়াছেন আমার উদ্দেশ্য ইহা জানা নয়, বরং জানিতে চাহিতেছি যে, তুমি কাহার নিকটে পড়াশােনা করিয়া থাকো? তিনি অত্যন্ত আফসােসের সহিত উত্তর দিয়াছেন-কাহারাে কাছে নয়। ইমাম শায়াবী বলিয়াছেন – আমি তােমার মধ্যে এক অসাধারণ প্রতিভা দেখিতে পাইতেছি। তুমি উলামাদের কাছে বসা আরম্ভ করিয়া দাও। এই উপদেশ তাহার দিলের দুনিয়াকে পরিবর্তন করিয়া দিয়াছে।

তিনি আর কাল বিলম্ব না করিয়া ইল্ম হাসেল করিবার দিকে আকৃষ্ট হইয়া পড়িয়াছিলেন। প্রকাশ থাকে যে,এইইমাম শায়াবী ছিলেন একমহা সৌভাগ্যবান ব্যক্তি।কারণ, তিনি পাঁচশত সাহাবায় কিরামের সহিত সাক্ষাতের সৌভাগ্যলাভ করিয়াছিলেন। কেবল তাই নয়, আরাে প্রকাশ থাকে যে, ইমাম শায়াবী ছিলেন কূফার সুবিখ্যাত ইমাম। ইনি ইমাম আবু হানীফার প্রথম সারির শায়েখ ছিলেন।

হজরত হাম্মাদের শাগরেদী

ইমাম আবু হানীফার যুগে বহু প্রকারের ইল্মের চর্চা ছিলাে। অনুরূপ অনেক বাতিল ফিরকা মাথাচাড়া দিয়াছিলাে। এইজন্য তিনি সর্ব প্রথম ঈমানকে হিফাজত করিবার উদ্দেশ্যে ইল্মে কালাম বা আকায়েদ বিদ্যার দিকে ধ্যান দিয়াছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইল্মে ফিকহের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া ছিলেন। এই যুগে কূফার বিখ্যাত ইমাম ছিলেন হজরত হাম্মাদ।
হজরত হাম্মাদ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের বিশেষ খাদেম হজরত আনাস রাদী আল্লাহু আনহুর নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করিয়া ছিলেন এবং বড় বড় তাবেঈনদের সহিত সাক্ষাত করতঃ তাহাদের নিকট থেকে হাদীস শ্রবন করিয়াছেন। এই যুগেকূফাতে হজরত হাম্মাদের মাদ্রাসা ছিলাে সবচাইতে বড়।
হজরত ইমাম আবু হানীফা হজরত হাম্মাদের প্রথম সারির শিষ্য ছিলেন।
তাহার অসাধারণ স্মৃতি শক্তি ও প্রতিভা দেখিয়া হজরত হাম্মাদ ইমাম সাহেবকে নিজের সামনে খুব কাছাকাছি বসাইয়া বলিয়াছিলেন আবু হানীফা সবার সামনে বসিবে।
ইমাম সাহেব হজরত হাম্মাদের দরসে দুই বৎসর বসিয়া ছিলেন। একবার হাম্মাদ বিশেষ প্রয়ােজনে বাসরায় গিয়াছিলেন, দুই মাস পরে ফিরিয়া ছিলেন।
এই দুইমাস ইমাম আবু হানীফা হাম্মাদের স্থানে বসিয়া ইল্মে ফিকহার দন্স দিয়া ছিলেন।
একশত কুড়ি হিজরীতে হজরত হাম্মাদের ইন্তেকালের পর ইমাম সাহেব আরাে অনেক বড় বড় ফকীহদের সঙ্গলাভে ইল্মে ফিকাহার শিক্ষা লাভ করিয়া ছিলেন কিন্তু হজরত হাম্মাদই ছিলেন তাহার প্রধান গুরু।
মুসনাদে ইমাম আযম

ইমাম আবু হানীফা হাদিসশাস্ত্রের প্রধান ইমাম।

মহান আল্লাহ ইমাম আযম আবু হানীফা রাহমতুল্লাহি আলাইহিকে দু’টি বড় নেয়ামত দিয়েছেন। প্রথমত তাঁকে প্রথম শতাব্দীতে জন্ম দিয়ে খায়রুল কুরুন তথা উত্তম যুগের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।দ্বিতীয়ত তাঁকে উচুমানের দ্বীনি দূরদৃষ্টি দান করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম ও প্রথমসারির তাবেঈদের সাহচর্য তাঁর খােদাপ্রদত্ত যােগ্যতাকে আরাে সজ্জিত করেছেন। যার ভিত্তিতে তিনি কুরআন-হাদীস
অনুধাবন, মাসায়েল বের করা ও আহকাম উদ্ভাবন করার নতুন পদ্ধতি সৃষ্টি করেছেন।

খারিজী সম্প্রদায়ের এক বড় নেতার সাথে বাহাস।

খারিজী সম্প্রদায়ের এক বড় নেতা ছিলেন যার নাম ছিলো যাহহাক খারিজী।
তিনি একদা ইমাম আবু হানীফার নিকটে আসিয়া তলোয়ার দেখাইয়া বলিয়াছিলেন – “তওবা করো।” ইমাম সাহেব জিজ্ঞাসা করিয়াছেন – কি জন্য? যাহহাক বলিয়াছে, তােমার ধারণা হইল যে, হজরত আলী (রাদী আল্লাহু আনহু) মুয়াবিয়ার ঝগড়ায় তৃতীয় পক্ষ মানিয়া নিয়া ছিলেন। তিনি তাে হকের উপরে ছিলেন। তৃতীয় পক্ষ মানিয়া নেওয়ার অর্থ কী?
ইমাম আবু হানীফা উত্তরে বলিয়াছিলেন – যদি আমাকে কেবল হত্যা করাই উদ্দেশ্য হইয়া থাকে, তাহা হইলে কিছু বলিবার নাই। আর যদি যাচাই করিবার উদ্দেশ্য থাকে, তাহা হইলে আমাকে কিছু বলিতে দিন। যাহহাক বলিয়াছে – আমি মুনাজারা করিতে চাহিতেছি।
ইমাম আবু হানীফা বলিয়াছিলেন – যদি আমাদের মধ্যে বাহাসের ফলাফল বাহির হইয়া না থাকে, তাহা হইলে কি হইবে? যাহহাক বলিয়াছে – আমরা দুই জনে একজন তৃতীয় পক্ষ মানিয়া নিব।
অতঃপর যাহহাকের সঙ্গীদের মধ্যে থেকে একজনকে বাছিয়া নেওয়া হইয়াছিল, যিনি উভয়ের মধ্যে হক্ক ও বাতিলের ফায়সালা করিবেন।
ইমাম আবু হানীফা বলিয়াছিলেন, হজরত আলী (রাদি আল্লাহু আনহু) তাে ইহাই করিয়া ছিলেন। সুতরাং তাহার অপরাধ কোথায়? ইহার পরে যাহহাক দম ধরিয়া নীরবে উঠিয়া চলিয়া গিয়াছিলেন।

ঈমাম আবু হানিফা রহ: এর জীবনী জানতে নিচের বই গুলো পড়তে পারেন।

  • ১। ইমাম আবু হানিফা রহ. জীবন ও কর্ম
  • ২। ইমাম আবু হানিফা- আকাশে অঙ্কিত নাম
  • ৩। ইমাম সিরিজ (সমকালীন প্রকাশন)
  • ৪। সীরাতে নোমান (মক্তব প্রকাশনী)
আরো পড়ুন:
  1. যাদু ও জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যার আমল
  2. যাদুর রুকইয়াহর আয়াতের তালিকা
  3. কবিরা গুনাহের বিবরণ
  4. হস্তমৈথুনের কুফল সমূহ জানতে হবে
  5. পর্নোগ্রাফির মরণকামড় থেকে মুক্তির উপায়
  6. দুরুদ শরীফ পাঠের ফজিলত
Exit mobile version